মুভি সম্পর্কে লিখতে গেলে সর্বপ্রথম যে জিনিসটা সামনে আনতে হবে সেটা হলো মুভির জনরা, মুভির জনরা কি? হরোর ফ্যান্টাসি ঘরানার এই মুভিটি সচারাচর হরোর উপাদানকে উপেক্ষা করে আপনাকে দিয়েছে এক ব্যতিক্রম কনসেপ্ট। মুভির শুরুর মিথকে যদি কোনো হিস্টোরির সাথে মিলিয়ে আপনি জনরা নির্ধারণ করতে যান তখন হরোর ফ্যান্টাসির সাথে হিস্টোরিক্যাল পিরিয়ড ড্রামার মিশেলে তৈরী মুভিটি, মুভির শুরুর মিথ কোনো হিস্টোরির সাথে মিলে কিনা, এই প্রশ্নের উত্তরে বলতে হবে, হিন্দুত্ববাদে এমন কোনো মিথ না পাওয়া গেলেও গ্রিকত্বত্ত্বে কিছুটা মিল পাওয়া যায়।
স্টোরিঃ-
মুভিটি দুবার শুট করা হয়েছে, এর আগে বছর ছয়েক আগে মুভিটিকে শুট করা হয় বাট ডিরেক্টর যে জিনিসটাকে উপস্থাপন করতে চেয়েছে সেটা সেই শুটে উঠে আসেনি, তাই তিনি নতুন স্ক্রিপ্টে আবারো শুট করেন। মুভিটিকে ৩টি কালে বিভক্ত করেছেন পরিচালক, খোলা চোখে মনে হবে "লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু" এই প্রবাদকে কেন্দ্র করে মুভির কনসেপ্ট এগিয়েছে। ১ম অধ্যায় এগিয়ে যায় ১৯১৮ সনের তুম্বাড় গ্রামের এক ফ্যামেলিকে কেন্দ্র করে, যেখান থেকে পরিবারটি পথ মাড়ায় অন্য দিকে। ২য় পর্বে দেখানো হয় ১৫ বছর পর প্রধাণ চরিত্রের আবারো সেই তুম্বাড়ে গমন, এবং লাস্ট অধ্যায়তে দেখতে পাই মূল চরিত্র তার ফ্যামেলির ভবিষ্যৎ নির্ধানের যুদ্ধ। এ গল্প যেনো এক অনন্য আর্ট, যেখানে ফ্যান্টাসি, হরোর, ড্রামা সবকিছুকে নিয়ে এসেছে।
চরিত্রঃ-
মেইন চরিত্র ভিনায়কের প্রাপ্ত বয়সের ক্যারেক্টারে যে অভিনয় করে সে হলো সোহান শাহ, এতো দারুন ও সাংঘাতিক অভিনয় অন্য কারো পক্ষে সম্ভব হতো কিনা জানা নেই, বডিল্যাঙ্গুয়েজ থেকে শুরু করে প্রতিটা সংলাপ ছিলো অসাধারণ, দৃঢ় এক লোভী পৌরষ কে যেভাবে প্রেজেন্ট করেছে সত্যিই অতুলোনীয়, আর ভিনায়কের ছোটো বেলার চরিত্র ও তার ভাইয়ের চরিত্র এবং ভিনায়কের ছেলের চরিত্রে যে শিশুগুলা ছিলো, তারাও নিজেদের বেস্টটা দিয়েছে, অসাধারণ বললেও কম হবে। সাবলিল ও পর্যাপ্ত অভিনয় ছিলো পুরো মুভিজুড়ে। আরেকটা জিনিস আপনি জানলে আপনার চোখ আসমানে উঠে যাবে, ভিনায়কের ছেলের চরিত্রে যে ছেলেটা অভিনয় করে, ভিনায়কের দাদির চরিত্রে সেই অভিনয় করে, আমি ওর ফ্যান হয়ে গেছিরে। মোহাম্মাদ সামাদ ওর নাম, কতোটা ট্যালেন্টেড হলে এটা সম্ভব ভেবে দেখেছেন? সেরা সেরা।
ঘটনাপ্রবাহ/পরিবেশঃ-
এই এখানেই পরিচালক এক অনন্য আর্টের পরিচয় দিয়েছেন, মুভিটা হরোর, বাট কোনো ভীতিকর কিছু পাবেন না মুভির শুরু থেকেই, বাট ডিরেক্টরের স্ক্রিনপ্লেই এতো অসাধারণ ছিলো যে, কিছু না দেখেও অজানা এক ভীতি সবসময়ই আপনার মধ্যে কাজ করবে, ভিনায়কের দাদীমা এক আশ্চর্য ক্যারেক্টার ছিলো পুরো মুভিতে, মুভির শুরু থেকে বদ্ধ ঘরে বন্দী থাকে, বাট পরিবারের সবার মাঝে তার ভীতিটাকে এমনভাবে প্রেজেন্ট করেছেন পরিচালক যে অডিয়েন্সদেরও গা ছমছম করে উঠবে, এরপর যখন দাদীমাকে প্রথম স্ক্রিনে আনা হয়, আপনি শিউরে উঠবেন নিশ্চিত, এবং স্তব্ধ হয়ে যাবেন, সে এক সাংঘাতিক পরিস্থিতি, এরপর সেই ব্রিটিশ আমলকে এতো সুন্দরভাবে স্ক্রিনে আনেন যেনো ডিরেক্টর আর্টের কারিগর। লাস্টের ঘটনাপ্রবাহ আপনাকে এমন আজিব ঘটনার মুখোমুখি করবে যেটা হয়তো আপনি ভেবে পাবেন না এখন।
সিনেমাটোগ্রাফীঃ-
মুভির মূল শক্তি ছিলো এই সিনেমাটোগ্রাফিতে, আপনি এই মুভিটাকে গভীরভাবে দেখলেই বুঝবেন আসলে দারুন সিনেমাটোগ্রাফি একটা সিনেমাকে কোন লেভেলে নিয়ে যেতে পারে, একদম শুরুর তুম্বাড় শহরকে যেভাবে প্রেজেন্ট করা হয় তা ছিলো নয়নাভিরাম, সিনেমাটোগ্রাফার পংকজ কুমার, নিঃসন্দেহে তার ক্যারিয়ারের অন্যতম একটি সেরা কাজ আমাদের উপহার দিয়েছেন। গা ছমছম করে তোলা তুম্বাড় গ্রামের এমন নিরিবিলি, বৃষ্টিস্নাত ও অন্ধকারচ্ছন্ন পরিবেশ, মুভির প্রতিটি দৃশ্যে, বিশেষত ভিনায়কের বেড়ে উঠা বাড়ি, বিভিন্ন অংশে আবাসস্থলে যে থমথমে ভাব বজায় ছিল, তা আপনাকে কোনো রকম ভূত-পেত্নীর আগমন ছাড়াও অস্বস্তিকর ও ভীতিকর করে ছাড়বে তার উপর সিনেমার ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর পরিস্থিতিকে আরও গাম্ভীর্যপূর্ণ করে তুলেছিল। কিছু দৃশ্যের অভূতপূর্ব কাজ একদম পিলে চমকে দেবে আপনাকে। এসবই ছিলো ডিরেক্টর ও সিনেমাটোগ্রাফির যৌথ কেলমা। তবে সিনেমাটোগ্রাফার না হলে এসব সম্ভব হতোনা।
নাহ, রিভিউকে আর বড় করবোনা, শুরু থেকেই ইচ্ছা ছিলো রিভিউকে সংক্ষেপ করবো, বাট মুভিটা আমাকে এতোটাই মুগ্ধ করেছে যে, বড় হয়ে গেলো, আরো তিন ডবল করলেও মুভি নিয়ে আমার অভিব্যক্তি শেষ হবেনা। এক কথায় বলতে গেলে মুভিটি ছিলো বলিউডের হরোর মুভির এক অনন্য সৃষ্টি, যা বলিউডকে আরো সমৃদ্ধি এনে দিলো।