ড্রামা,রোম্যান্স,থ্রিলার,হরর,ফ্যান্টাসি, অ্যাকশন আরো কত কী! এখন এক কাজ করেন। এই সবগুলো জনরা একসাথে একটা মুভির মধ্যে ঢেলে দেন।তৈরী হয়ে গেল ২০১৮ সালের সুইডিশ ফিল্ম 'বর্ডার'।
ভাবছেন সবগুলো জনরার মিক্স?
কী অখাদ্য জগাখিচুড়ি মুভি কে জানে!
তবে আপনার ধারণা একেবারেই ভুল। ‘বর্ডার’ এর মত ওয়েল ব্যালেন্সড একটা সিনেমা খুবই কম দেখেছি গত কয়েক মাসে। এক্সপেরিমেন্টাল সিনেমাগুলো নিয়ে আমার একটা ধারণা আছে,হয় সেগুলো একেবারে জঘন্য হয় না হলে সেগুলো একেবারে অনন্য হয়। ‘বর্ডার’ এ বছরের এক্সেপশোনাল একই সাথে অনালোচিত একটা ফিল্ম।মুভির স্টোরিলাইন খুবই সুন্দর এবং সিকুয়েন্সগুলো সুন্দরভাবে পরিকল্পিত। মুভি শুরু হওয়ার পর আপনি একটা সেরেনিটির মধ্যে পড়ে যাবেন।ভিজুয়ালি এট্রাক্ট করার মত দারুণ সব দৃশ্য আছে।তবে একই সাথে রয়েছে অনেক ডিস্টার্বিং সিন। অনেক আনইউজুয়াল সেক্সুয়াল সিন আছে যা অনেকেরই হজম হবে না।তাও মুভিটা সুন্দর।প্রথম প্রথম আপনার মনে হবে কোনো ঢিলাঢালা ড্রামা দেখতে বসেছেন।সময়ের সঙ্গে কাহিনীর ভেতরকার জট যখন খুলতে শুরু করে তখন মুভিটা আরো জমতে শুরু করে।এবং মিস্ট্রি কিন্তু একটাই না, একাধিক। ড্রামা থেকে বেরিয়ে আস্তে আস্তে মুভিটা বিভিন্ন জনরায় বিচরণ শুরু করে। একই মুভির ভেতর অনেক ভিন্ন জিনিস নিয়ে আলোচনার বিষয় আছে যা অন্যান্য মুভি থেকে এটিকে আলাদা করে।
মুভির প্রোটাগনিস্ট টিনা (এভা মালেনদার) একজন সুইডিশ কাস্টম অফিসার।টিনার একটা অদ্ভুত ক্ষমতা আছে। সে কোনো মানুষের কিংবা বস্তুর গন্ধ শুঁকে কোনো অসংগতি শনাক্ত করতে পারে।মানুষের লজ্জা,অনুতপ্তবোধ কিংবা অন্যায়ের কথা বুঝতে পারে।এই কারণেই সে বুঝতে পারে প্লেনের কোনো যাত্রী ড্রাগস কিংবা অন্য কোনো কিছু বহন করছে কী না। একদিন সে এক প্যাসেঞ্জারের কাছ থেকে চাইল্ড পর্নোগ্রাফিতে ভর্তি একটি মেমরি কার্ড উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। টিনার বস তাই তাকে এই ব্যাপারে ইনভেস্টিগেট করার জন্য নিযুক্ত করে। কাহিনীর এই হল একটা পিঠ যা এখনো পর্যন্ত সব নরমাল বলেই মনে হচ্ছে।
কাহিনীর অন্য পিঠে আসা যাক, টিনা নিজে একটা রোগে আক্রান্ত। তার মুখটা অদ্ভুতভাবে বিকৃত। ক্রোমোসোমাল ডিফর্মিটির কারণে তার এই অবস্থা।তবে একদিন সে এয়ারপোর্টে তারই মত অবিকল একটি লোককে দেখতে পেল যার মুখও বিকৃত। তখনই সে লোকটার জন্য অদ্ভুত এট্রাকশন অনুভব করে।ঘটনাচক্রে লোকটার সাথে আবার দেখা হয় এবং টিনা তাকে নিজের বাসায় রেন্টে থাকার জন্য আমন্ত্রণ জানায়। টিনা থাকে জঙ্গলে ঘেরা এক আইসোলেটেড জায়গায়। এখানে সে রোল্যান্ড নামের একজন ডগফাইটারের সাথে একসাথে লিভ ইন করে।একসময় টিনা এবং অদ্ভুত লোকটির মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে।এরা নিজেদের শরীর নিয়ে বিভিন্ন মিস্টিরি জানতে শুরু করে।অদ্ভুত লোকটা সম্পর্কেও বিভিন্ন অজানা মিস্টিরিয়াস তথ্য জানতে পারে।একই সাথে এগিয়ে চলে চাইল্ড পর্নোগ্রাফির ইনভেস্টিগেশন।এভাবেই সমান্তরালভাবে দু দুটো মিস্টিরি আস্তে আস্তে আনর্যাভেল হতে থাকে।সে পর্যন্ত কী দাঁড়ায় সেটা নিয়েই 'বর্ডার' সিনেমা।
আপাত দৃষ্টিতে একটা সিম্পল মিস্ট্রি ফিল্ম মনে হলেও এই মুভিতে সোশ্যাল রিয়ালিজম এর অনেক ব্যাপার স্যাপার আছে। হিউম্যানিটিকে স্যাটায়ার করা হয়েছে অনেকভাবে।সঙ্গে সঙ্গে নর্স মিথোলজির সাথে মিলমিশ খাইয়ে এমন একটা অস্থির ফ্যান্টাসি মুভির অবতারণা করা হয়েছে যে প্রশংসা না করে পারা যায় না।প্রথমদিকে একটু স্লো হলেও শেষের দিকে একটা দারুণ থ্রিল উপভোগ করতে পারবেন।তার উপর টিনা এবং তার বাবাকে নিয়ে হাল্কা পাতলা ফ্যামিলি ড্রামার ছোঁয়াও পেয়ে যাবেন।অনেক ডিস্টার্বিং সিনে পরিপূর্ণ থাকলেও শেষে একটা অদ্ভুত প্রশান্তির দৃশ্য দিয়ে মুভিটার এন্ডিং।মুভিটায়ে বিশদভাবে আলোচনা করার অনেক বিষয়বস্তু আছে,আপনি দেখলে মোটামুটি ফিল করতে পারবেন।যেহেতু রহস্য এবং টুইস্ট আছে তাই সবকিছু নিয়ে আলোচনা করার স্কোপ কম।স্পয়লার হয়ে যাবে।তবে এটা বলব যে, পুরো মুভিটাই একটা সাররিয়াল এক্সপেরিয়ান্স।
অভিনয়ের দিক থেকে অন্য সবকিছু থেকে ছাড়িয়ে গেছে এই মুভি।মূল চরিত্রে এভা মালেনদার এবং এওরো মিলানফ রীতিমতো ‘দানবীয়’ পারফরম্যান্স দিয়েছেন।সিনেমাটোগ্রাফি এবং প্রোডাকশন ডিজাইন গ্রেট।সব মিলিয়ে আলি আব্বাসির দারুণ একটা সিনেমা দাড় করিয়েছেন।যদিও সুইডেন থেকে মুভি অস্কারের জন্য পার্টিসিপেট করলেও নমিনেশন পায় নি।একমাত্র কৃতিত্ব মেক আপ এবং হেয়ার স্টাইলিং এ নমিনেশন।
মুভির ত্রুটির মধ্যে আমার চোখে যেটা লেগেছে যে একটা দুইটা টুইস্ট আন্দাজ করতে পেরেছি।তবে আমি পেরেছি বলে অন্য সবাই পারবে সেটা আমার মনে হয় না।তবে এই টপ নচ ফিল্মটা সবার আননোটিসড যেন না থেকে যায় তাই আমি রেকমেন্ড করব মুভিটা দেখতে।
হ্যাপি ওয়াচিং!