Know info before watch, but no Spoiler

'Chapak' ছাপাক অন্য এক দীপিকা

Chapak ছাপাক অন্য এক দীপিকা

"আমার কেবিনে কোন আয়না রাখা হয়নি, বদলে যাওয়া চেহারাটা দেখে যদি সেই ধাক্কাটা সইতে না পারি আমি- এই ভয়টা করেছিল ডাক্তারেরা। একজন নার্স সকালে একটা গামলায় পানি নিয়ে আসতেন আমার মুখ পরিস্কার করে দিতে- সেই পানির দিকে তাকিয়ে ব্যান্ডেজে ঢাকা বিকৃত চেহারাটার প্রতিচ্ছবি দেখে আঁতকে উঠতাম আমি। গায়ে অ্যাসিড পড়ার সেই মূহুর্তটার কথা আমি কোনদিন ভুলতে পারবো না, মনে হচ্ছিল, কেউ বুঝি আমার শরীরে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে! এত কষ্ট, এত যন্ত্রণা এর আগে কখনও পাইনি আমি। আমার হাত আর মুখ তখন শরীর থেকে আলাদা করে ফেললেও বোধহয় এতটা ব্যাথা পেতাম না আমি!"

কথাগুলো অ্যাসিড সন্ত্রাসের শিকার হওয়া ভারতীয় তরুণী লক্ষ্মী আগারওয়ালের। তার জন্ম হয়েছিল দিল্লীর এক মধ্যবিত্ত পরিবারে। বয়স যখন বছর পনেরো, তখন নাইম খান নামের এক লোক তার বাসায় বিয়ের প্রস্তাব পাঠায়। স্বাভাবিকভাবেই, সেটা প্রত্যাখ্যান করে লক্ষ্মীর পরিবার, কারণ তারা হিন্দু। লক্ষ্মী নিজেও সেই লোককে পছন্দ করতো না, নাইম খানের বয়সও ছিল তার দ্বিগুনেরও বেশি! প্রত্যাখ্যাত হবার পরে লোকটা আরও বেশি করে বিরক্ত করা শুরু করে লক্ষ্মীকে, পুলিশে অভিযোগ জানিয়েও নিস্তার পাওয়া যাচ্ছিল না তার হাত থেকে।

লক্ষ্মী তখন স্কুলে পড়াশোনার পাশাপাশি দিল্লির খান মার্কেটে একটা বইয়ের দোকানে সহকারী হিসেবে কাজ করতো। ২০০৫ সালের কথা বলছি। এক সকালে বাসা থেকে হেঁটে খান মার্কেটের দিকে যাচ্ছিল লক্ষ্মী, দোকানের প্রায় কাছাকাছি চলে এসেছে, এমন সময় রাস্তার উল্টোপাশ থেকে নাইম খানকে আসতে দেখলো সে। অন্যদিকে তাকিয়ে হেঁটে চলে যাওয়ার চেষ্টা করলো লক্ষ্মী, কিন্ত সে জানতো না, নাইম সেদিন খালি হাতে আসেনি। ছোট একটা বিয়ারের বোতলকে নিজের দিকে উড়ে আসতে দেখলো লক্ষ্মী, হাত বাড়িয়ে সেটা ঠেকানোর চেষ্টা করলো সে।

তারপরে কয়েকটা মূহুর্তে যেন নরক নেমে এলো কিশোরী লক্ষ্মীর ওপরে। বিয়ারের বোতলটা ছিল অ্যাসিডভর্তি, সেই তরলটা আঘাত করলো লক্ষ্মীর মুখে, হাতে। রাস্তায় গড়িয়ে পড়ে চিৎকার করতে থাকলো মেয়েটা, আশেপাশের মানুষগুলো তখন হতভম্ভ হয়ে তাকে দেখছে! প্রায় মিনিট পাঁচেক পরে এক ট্যাক্সিওয়ালা পাঁজাকোলা করে তাকে গাড়িতে ওঠালো, নিয়ে গেল হাসপাতালে। যমে মানুষে টানাটানি শুরু হলো, ডাক্তারদের হার না মানা মানসিকতা লক্ষ্মীকে ফিরিয়ে আনলো মৃত্যুর মুখ থেকে। তবে সুন্দর মুখটাতে চিরদিনের জন্যে একটা দাগ বসে গেল তার।

লক্ষ্মীর গল্পটা এখানে শেষ হয়ে যেতে পারতো। ভারত বা বাংলাদেশের হাজার হাজার অ্যাসিডদগ্ধ নারী যেভাবে বাকিটা জীবন ঘোমটার আড়ালে মুখ ঢেকে কাটিয়ে দেয়, লক্ষীও সেভাবে জীবন কাটাতে পারতো। কিন্ত লক্ষ্মী ঠিক করলো, এভাবে নয়, সে বাঁচবে বাঁচার মতো করে, কারো করুণার পাত্রী হয়ে নয়। ২০০৬ সালে হাইকোর্টে একটা পিআইএল দাখিল করলো সে, বেআইনীভাবে খোলা বাজারে এসিড বিক্রি বন্ধের দাবীতে। #StopSaleAcid নামের ক্যাম্পেইন নিয়ে সারাদেশে ঘুরলেন লক্ষ্মী। ২০১৩ সালে আদালত রায় দিলো, কোম্পানীর লাইসেন্স ছাড়া অ্যাসিড কেনাবেচা করা যাবে না, পুরো ব্যাপারটাতে সরকারের নজরদারী থাকতে হবে।

এর মাঝের সময়টাতে নিজের পড়ালেখা শেষ করেছেন লক্ষ্মী, একটা এনজিও খুলেছেন অ্যাসিডদগ্ধ নারীদের সাহায্য করার জন্যে। ঘরে ঘরে গিয়ে মানুষকে সতর্ক করেছেন, পথসভা করেছেন। ইন্টারনেট যখন সহজলভ্য হলো, তখন অনলাইন পিটিশন চালিয়েছেন, এরও আগে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে প্রায় ত্রিশ হাজার মানুষের স্বাক্ষর নিয়েছেন পিটিশনের জন্যে অ্যাসিড সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার করিয়েছেন তরুণদের। ভারতে অ্যাসিডের আঘাতে ঝলসে যাওয়া নারীদের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছেন তিনি।

সাবেক মার্কিন ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা লক্ষীকে পুরস্কৃত করেছেন তার সাহসিকতা এবং পরিশ্রমের জন্যে, বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে আরও অনেক পুরস্কার পেয়েছেন লক্ষ্মী, ভারত সরকারও যথাসাধ্য সাহায্য করেছে তাকে। লক্ষ্মীর ওপরে যে লোক অ্যাসিড হামলা করেছিল, আদালতে বিচার হয়েছে তারও। অ্যাসিড সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কাজ করতে গিয়েই পরিচয় হয়েছিল অলোক দিক্ষিত নামের এক তরুণের সঙ্গে, বন্ধুত্ব থেকে  দুজনে হয়েছিলেন জীবনসঙ্গী, কিছুদিন আগে তারা আলাদাও হয়ে গিয়েছেন।

এক কন্যাসন্তানের জননী লক্ষ্মী তখন বেশ খানিকটা বেকায়দায় পড়েছিলেন, কারণ উপার্জন করার মতো কোন চাকুরি ছিল না তার। অনেকেই তাকে চাকুরি দিতে চেয়েছেন, কিন্ত লক্ষ্মীর আত্মসম্মানবোধ টনটনে, কারো করুণার পাত্রী হবার বিন্দুমাত্র ইচ্ছেও তার ছিল না। লক্ষ্মী বলেছিলেন, যদি সরকার থেকে তাকে কোন চাকুরির প্রস্তাব দেয়া হয়, তাহলেই তিনি ভেবে দেখবেন। পরে একটা টিভি চ্যানেলের উপস্থাপিকা হিসেবে যোগ দিয়েছেন তিনি।

লক্ষ্মী আগারওয়ালের জীবনটা সিনেমার চেয়েও বেশি নাটকীয়, সেখানে সুখের চেয়ে কষ্টটা বেশি, সংগ্রামী সেই  পথটা ভীষণ কণ্টকাকীর্ণ। সেই জীবনটাকেই এবার সিনেমায় ফুটিয়ে তুলতে চলেছেন দীপিকা পাড়ুকোন, ক্যামেরার পেছনে আছেন আরেক মাস্টারমেকার মেঘনা গুলজার। সিনেমার নাম 'ছপাক', সেটার ফার্স্ট লুক রিলিজ পেলো আজ সকালেই।

ইনস্ট্যাগ্রামে আপলোড করা দিপীকার ছবিটা দেখে অবাক হয়েছেন অনেকেই। গালের একপাশ ক্ষতবিক্ষত, অ্যাসিডের আঘাতে পুড়ে যাওয়া চামড়া; মানবসৃষ্ট বিভৎসতার ভয়াবহ এক নমুনা যেন! এরমধ্যেও দৃষ্টি কেড়ে নেয় মায়াবী চোখজোড়া- অ্যাসিড আক্রান্ত নারী হিসেবে নিজেকে পর্দায় ফুটিয়ে তোলার জন্যেই দীপিকার এই বেশভূষা। চরিত্রের নাম মালতী, ইনস্ট্যাগ্রামে ছবিটা শেয়ার দিয়ে দীপিকা লিখেছেন- 'এমন একটি চরিত্র, যা আমার সঙ্গে সারাজীবন থাকবে...মালতী।'

নেক্সট প্রোজেক্ট নিয়ে দীপিকা বেশ উচ্ছ্বসিত, সেটা বোঝাই যাচ্ছে। সিনেমা মুক্তির পরেও এই উচ্ছ্বাসটা টিকে থাকবে, এটাই কামনা। আরেকটা চাওয়া থাকবে, সিনেমার ডামাডোল কিংবা গ্ল্যামারের ভীড়ে যাতে বাস্তবের লক্ষ্মী আগারওয়ালের সংগ্রামটাকে কেউ ভুলে না যায়...

Avengers: End Game ফ্যান থিওরি


মার্ভেল সিনেম্যাটিক ইউনিভার্সের ২২ তম মুভিটি রিলিজ পেতে আর মাত্র ৩৮ দিন বাকি। এর মধ্যে আমরা দুটি ট্রেলার একটি টিভি স্পট পেয়েছি, যা থেকে অল্প একটু ধারণা করা যায় কী হবে মুভিটিতে। কারণ কেভিন ফাইগি সোজাসাপটা বলে দিয়েছেন প্রমোশনাল যা কিছুই রিলিজ দেয়া হবে, সেগুলোতে  কেবল মুভির প্রথম ১৫-২০ মিনিটের সিন ব্যবহার করা হবে। আর মার্ভেলের ট্রেলারে ফেক সিন তো থাকবেই। তাই নিশ্চিত ভাবে কিছুই ধারণা করা যায় না।


যা বোঝা যাচ্ছে।

১. টনি স্টার্ক তো অবশ্যই ফিরে আসবে। সম্ভবত ট্রেলারের শেষে নতুন যে স্যুটগুলো দেখা যাচ্ছে সেগুলো সে বানিয়েছে। তাকে কে উদ্ধার করবে সেটার লিস্ট আস্তে আস্তে বড় হচ্ছে৷ গতমাসেই সম্ভবত অডি গাড়ির বিজ্ঞাপনে দেখানো হয় রকেট উদ্ধার করবে টনি স্টার্ককে। টনির সাথে সাথে প্রথমবারের মত পৃথিবীতে আসে নেবুলা। মূলত কমিকে নেবুলা থ্যানসের কাছ থেকে গন্টলেট নিয়ে স্ন্যাপ রিভার্স করে। তবে মুভিতে এটা হবে না তা নিশ্চিত। তবে সে বর্তমানে সবচাইতে বেশি জানে থ্যানস সম্পর্কে। তাই সে মুভিতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকাই প্লে করবে।

২. হক আই যেকারণে মুভিতে রোনিন হবে তা মূলত এই ট্রেলারের মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া গেল। স্ন্যাপে পরিবার হারানোর পর সে হক-আই ছেড়ে এই রোনিন ম্যান্টল নিবে।

ট্রেলারে হক-আইকে দেখানো হয় একটি মেয়ের সাথে। মেয়েটি সম্ভবত কেট বিশপ বা হক-আইয়ের মেয়ে। তবে যেই হোক, সম্ভবত এই চরিত্রে অভিনয় করবে ক্যাথেরিন ল্যাংফোর্ড।

৩. হাল্ক বেচারাকে একবারও দেখানি। যদিও অনেকের ধারণা প্রফেসর হাল্ক থাকবে মুভিতে। মার্ভেল আমাদের শেষ মূহুর্তেই চমক দিবে হয়তো।

৪. ক্যাপ্টেন মার্ভেল যোগ দিলো এভেঞ্জারসদের সাথে। হ্যাঁ, নিক ফিউরির ম্যাসেজ ফিরিয়ে এনেছে তাকে আবার পৃথিবীতে৷ ক্যাপ্টেন মার্ভেল মুভিতে দেখেছি সে কতটা পাওয়ার ফুল। তাই এবার থ্যানসের খবর আছে।


এবার জানাই একটা ফ্যান থিওরি। এভেঞ্জারস মুভিটা তিন ঘন্টা কাছাকাছি হবে। এবং ধারণা করা হচ্ছে এভেঞ্জারসরা দুই থেকে তিনবার থ্যানসের সাথে ফাইট করবে। অর্থাৎ একবারেই গিয়ে থ্যানসকে হারিয়ে জিতে ফিরে আসবে না। মুভিতে অনেক কাহিনী আছে যা এই কয়েক মিনিটের ট্রেলার দেখে ধারণা করা যায়না। সুতরাং সম্ভবত প্রথমে সবাই একসাথে থ্যানসের প্ল্যানেটে গিয়ে ওকে আক্রমণ করবে।অর্থাৎ টাইটান টু, যেটায় থ্যানস চাষাবাদ শুরু করেছিল। কিন্তু ছয়টি স্টোন থাকায় আবার হেরে যাবে এভেঞ্জারস রা। সেখানে থেকে ফিরে আসবে। তারপর নতুনভাবে পরিকল্পনা করবে। এর মাঝে কেটে যাবে পাঁচ থেকে ছয় বছর। সুতরাং আমরা ধারণা করতে পারি এরমাঝেই নতুন কিছু ইয়াং সুপারহিরো দেখব। যেমন হক-আইয়ের মেয়ে, এন্টম্যানের মেয়ে এরাও মেবি সুপারহিরো হবে। প্লাস আয়রন ম্যান মুভির সেই পিচ্চি ছেলেটাকেও নাকি দেখা যাবে মুভিতে।

মুভিতে কোয়ান্টান রেলমের অনেক ভুমিকা থাকবে। তবে সেটা দিয়ে কি টাইম ট্রাভেল করবে নাকি অন্য কোন রিয়েলিটিতে যাবে সেটা মুভি দেখার পরেই বুঝতে পারব।

আরো ৩৮ দিন ।

Boss Baby মুভি রিভিউ


সাড়ে ৭ বছরের বাবা-মায়ের একমাত্র আদরের সন্তান টিম। সে কল্পনা করতে ভালবাসে। কল্পনার রাজ্যে হারিয়ে ফেলে নিজেকে সবসময় আর কল্পনার রাজ্যে তার সঙ্গী হয় তার মা-বাবা। টিমের আদর যত্নের প্রতি কোনো কমতি রাখেন না তার মা বাবা। শত ব্যস্ততার মধ্যেও টিমের মা-বাবা তাকে অনেক সময় দেন। খুব ভালই কাটছিল টিমের শৈশব। রাতে ঘুমানোর সময় ৩ টা গল্প, ৫ টা চুমু আর স্পেশাল গান তার চাই। একদিন টিমের বাবা-মা তাঁর (টিম) কাছে জানতে চায়, তাঁর একটা ছোট ভাই হলে কেমন হয়? টিম সোজাসুজি না বলে দেয়, এই ভেবে যে, তাঁর ছোট ভাই হলে তার আদর-ভালবাসা কমে যাবে।

কিন্তু একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে টিম দেখতে পায়, একটা টেক্সি থেকে স্যূট,বুট, টাই, ঘড়ি পরা একটা বাচ্চা তাদের বাসায় আসছে । তার মা-বাবা তাকে টিমের ছোটভাই বলে পরিচয় দেয়।এই স্যূট-বুট,টাই, ঘড়ি পরা ছোট বাচ্চাটিই হল "বস বেবি"।  এই বাচ্চা বাড়ির সবাইকে মাতিয়ে রাখে। কিছুদিন পর টিম লক্ষ্য করল, টিমের প্রতি তার মা-বাবার ভালবাসা, মনোযোগ আর আগের মত নেই। সব এই বস বেবি কেড়ে নিয়েছে।

আবার, টিম বুঝতে পারে এই বাচ্চা সাধারণ কেউ নয়, কেননা, এই বস বেবি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মত আচরণ করছে। একদিন দেখতে পায়, সে স্পষ্ট করে ফোনে কারও সঙ্গে কথা বলছে। ব্যাপারটা টিম তার বাবা-মাকে বুঝাতে চাইলেও, পারে না। উল্টো নিজে বিপদে পরে, তার মা-বাবার কাছ থেকে শাস্তি পায়।

একদিন বস বেবি নিজেই টিমকে তাঁর  পরিচয় জানায়, তার পৃথিবীতে আসার   পেছনে যে মিশন রয়েছে, সেটাও বলে ফেলে। মিশনের পর কি করবে সেটাও বলে ফেলে টিমকে। এই মিশনের কথা শুনে বস বেবিকে টিম সাহায্য করতে শুরু করে। হয়ে যায়, তারা একে অপরের পার্টনার।

কি মিশন নিয়ে পৃথিবীতে আসে এই বস বেবি? সেই মিশনে কি সফল হয় সে? টিম কি তার মা-বাবার ভালবাসা আবার আগের মত পায়? বস বেবিকে কিভাবে মিশনে সাহায্য করে টিম?  এসব প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে,  আজই দেখে ফেলুন অ্যানিমেটেড মুভি "The Boss Baby "

রিভিউ :

এই মুভিতে পরিচালক খুব সুন্দর করে দুই ভাইয়ের শৈশবকালকে এডভেঞ্চারের মাধ্যমে উপস্থাপন করেছেন। সেই সাথে দুই ভাইয়ের শত্রু থেকে বন্ধু হওয়ার মাধ্যমে যে গভীর সম্পর্ক হয়, তাও বুঝিয়েছেন। প্রথমদিকে গল্প সাদামাটা মনে হলেও, বস বেবি "টিম" এর পরিবারে আসার পর থেকে গল্পটা অসাধারণ।

এছাড়াও মুভির VFX, এডিটিং, ভয়েস সবকিছুই ভাল লেগেছে আমার।

( আপনি যদি এখনো মুভিটি না দেখে থাকেন, তাহলে ভাল লাগা দিকটি Ignore করেন। নয়তো, স্পয়লার পেয়ে যেতে পারেন।)

ভাল লাগা দিক :

১.মুভিতে টিমের জন্য যে স্পেশাল গানটা আছে, সেটা আমাকে খুব ভাল লেগেছে।

২. বস বেবি যখন সত্যিকারের বেবি হয়ে গেলে, যে কাজগুলো করে। সাথে কিন্তু ঐ সময় তার মুখটা দেখার মত হয়।

৩. মুভির মাধ্যমে পরিচালক যে মেসেজ দিয়েছেন, তা হৃদয়স্পর্শী।

Favourite  Quoted :

1. The path to success is not a straight line, Templeton! But rather a wild ride, like a ship at sea. And you're a sea captain... taming a turbulent ocean!

2. Whether you think you can, or you think you can't, you're right!

3. Survival of the fittest. It's the law of the jungle. There's always someone trying to take what's yours.

4. You can't be fired from your own family. Can you?

5.  I may look like a baby, but I was born all grown up.

6.  I can't even imagine not being a kid. You missed out on your whole childhood? You never had someone to love you?

7. You can’t miss what you never had.

Linkin Park & Chester Charles Bennington কিছু স্মৃতিকথা


I tried so hard and got so far
But in the end, it doesn’t even matter
I had to fall to lose it all
But in the end, it doesn’t even matter
আপনার কাছে এটা হতে পারে কয়েকটা শব্দগুচ্ছের ৪ টা লাইন মাত্র, কিন্তু প্রতিটা "লিংকিন পার্ক" ভক্তের কাছে এটা আবেগমিশ্রিত অমৃতসুধা। যে সুধা পান করে প্রতিটা ভক্ত গিয়েছে চেতনার গন্ডির ওপারে, হয়েছে বেনিংটন মাদকে আসক্ত! এই যে চেস্টার বেনিংটন নামের সুরযন্ত্রটা এভাবে মাতিয়া রেখেছে পার্থিব বিষন্নতাকে, সেই ছাপচিত্রের পেছনের কাহিনীটা হয়ত অনেকেরই অজানা। নব্বই দশকের শেষে "লিংকিন পার্ক" নামক ব্যান্ড-খানা না তৈরি হলে হয়ত এভাবেই মহাকালের বিস্মৃতির গভীরতায় হারিয়ে যেত দুনিয়া কাঁপানো এক কিংবদন্তি।


মাদকাসক্তি, যৌন নিপীড়নের শিকার আর স্কুলে সহপাঠীদের বেদম মার খাওয়া - চেস্টার বেনিংটন এর গল্পের শুরুটা হয়েছিল বিভীষিকাময় কিছু জিনিস দিয়ে।১৯৭৬ সালের ২০ মার্চ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনাতে পুলিশ অফিসার বাবা ও নার্স মায়ের ঘরে চেস্টার বেনিংটনের জন্ম। কিন্তু বিধি যেখানে বাম, সেখানে অল্পতেই অসফলতার ছোঁয়া। ৭ বছর বয়সেই,
বয়সে বড় এক বন্ধুর দ্বারা যৌন নিপীড়নের শিকার হন তিনি। লজ্জায় কারো কাছে এই ঘটনা বলতে পারেননি, কয়েক বছর ধরে সবার অগোচরে সমানতালে চলতে থাকে এই নিপীড়ন। কথাটা একসময় চেস্টারের বাবার কানে গেলেও চেস্টার তখন কোনো আইনী ব্যবস্থা নিতে চাননি। কারণ তখন তাঁর দৃষ্টিগোচর হয়েছিল, যে ছেলেটি তার সাথে অন্যায় আচরণ করেছিল, সে নিজেও এমনই এক অপরাধের শিকার হয়েছিল আগে। মূলত চেস্টারের জন্য বরাদ্দ দূর্ভাগ্যের তালিকা সেখান থেকেই শুরু। ১১ বছর বয়সে বাবা-মায়ের বিবাহ বিচ্ছেদে যেন মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে তাঁর। নিপীড়নের যন্ত্রণা আর একাকীত্ব, দুটোই যেন ঘাড়ে  একেবারে জেঁকে বসেছিল একেবারে সিন্দাবাদের দৈত্যের মতো। ফলশ্রুতিতে, মাদকের সংস্পর্শে আসেন চেস্টার। অভিভাবক আর বন্ধুহীন জীবনে আফিম, মেথ, কোকেন আর অ্যালকোহল হয়ে ওঠে তার নিত্যদিনের সঙ্গী। বিরানব্বইয়ের দিকে মাদক থেকে কিছুটা দূরে থাকার চেষ্টা করলেও কাঠালের কাঠার মতো তা আবারো আত্মার সাথে জুড়ে গেলো। ২০১১ সালে,ওয়ার্ল্ড ট্যুর এর সময় মদ্যপান করেন প্রচুর আর বলেছিলেন – “I just don’t want to be that person anymore.”১৯৯৬ সালে যখম সামান্থা অলিট নামের এক তরুণীকে বিয়ে করেন তখনো জন্ম হয়নি লিংকিন পার্কের। এক পুত্রসন্তান-সহ এই জুটির ডিভোর্স হয় ২০০৫ সালে। পরের বছরই চেস্টার বিয়ে করেন তালিন্দা অ্যান বেন্টলিকে, এই স্ত্রীর সাথে সংসার করেছিলেন মৃত্যুর আগ মুহুর্ত পর্যন্ত।


ভাগ্যের চাকা ঘুরাতে একসময় অ্যারিজোনা থেকে লস এঞ্জেলেসে পাড়ি দেন চেস্টার। এখানেই তিনি একটি ব্যান্ডের জন্য অডিশন দেন, পরবর্তীতে যেই ব্যান্ডের নাম হয় ‘লিংকিন পার্ক’। ব্যান্ডকে জনপ্রিয়তার শীর্ষে তুলতে কফিনের শেষ পেরেকটা ঠুকে দেন এই সুরের বাজিকর।ব্যান্ডের লাইন আপ পূর্ণতা পায় চেস্টারের উপস্থিতিতে। এই যে আজকে লিংকিন পার্কের "ঈর্ষণীয় সাফল্য" সেটা এনে দিয়েছেন এই চেস্টার নিজেই। কথায় আছে, "বিধাতা যারে দেয়, সবমতেই দেয়"। ফলে প্রথম এ্যালবাম ‘হাইব্রিড থিওরি’ দিয়েই বাজিমাত। উপরে যে চারটা লাইন লিখেছি এই লাইনগুলো সহ ‘ক্রলিং’, ‘ওয়ান স্টেপ ক্লোজার’, ‘ইন দি এন্ড’ আর ‘পেপারকাট’ এর মতো তুমুল জনপ্রিয় গানগুলো এই এ্যালবামের ফসল। দুই বছর গ্যাপ দিয়ে তারা বাজারে আনে তাদের ২য় অ্যালবাম‘মেটেওরা’। দুর্দান্ত ক্রেজে শীর্ষস্থান ধরে রাখে নতুন এই অ্যালবাম। সাথে, লিংকিন পার্ক যে একটা-দুটো হিট গানের ব্যান্ড নয়, সেটাও বেশ ভালোভাবেই প্রমাণ হয়ে যায়।আসলে তখন চাহিদা অনুযায়ী, নিজেদের অবস্থান পাকাপোক্ত করার জন্য ‘মেটেওরা’র মতো একটা অ্যালবাম দরকার ছিল খুব। শ্রোতারা সেই অ্যালবাম ভালোভাবেই লুফে নেয়, সাথে লিংকিন পার্ক বিশ্ব সঙ্গীতে তাদের অবস্থানটা পোক্ত করে নেয়। এভাবেই চেস্টারের কাঁধে ভর করে পুরো " লিংকিন পার্ক" উঠে আয় সফলতার চূড়ায়। ২০০৫ সালে চেস্টার লিংকিন পার্কের পাশাপাশি নিজের একটি আলাদা ব্যান্ডে কাজ শুরু করেন। ‘ডেড বাই সানরাইজ’ নামের সেই ব্যান্ডের একটি মাত্র এ্যালবাম মুক্তি পেয়েছে। ‘লিংকিন পার্ক’ যখন সাফল্যের শিখরে, তখন আবার মাদকের কাছে ফিরে যান চেস্টার।

লিংকিন পার্ক ও বাংলাদেশঃ-
যদি ইতিহাস ঘেটে দেখেন তা দেখতে পাবেন, ৯০ দশকে অধিকাংশ কিশোরের ইংলিশ গানের হাতেখড়ি হয়েছে এই লিনকিং পার্ক দিয়ে। যারা ওইসময় ছিলেন, যদি ওরকম কেউ আমার পোস্ট পড়ে থাকেন তাহলে আপনারাই তা ভালো বলতে পারবেন। বাংলাদেশে লিংকিন পার্ক তথা চেস্টারের রয়েছে হাজার হাজার ভক্তকুল। তবে এখানে বেশ মজা একটা কাহিনী রয়েছে।২০১৫ সালে স্টেজলাইট কনটেস্ট জিতে লিংকিন পার্কের স্টুডিওতে কর্মশালার সুযোগ পেয়েছিলেন বাংলাদেশী সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার জায়েদ হাসান। ওইসময়চেস্টারের সঙ্গে বেশ হৃদ্যতা তৈরি হয় তার।দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় জায়েদ এভাবে স্মৃতিচারণ করেছেন চেস্টার কে নিয়ে-

“লিংকিন পার্কের স্টুডিওতে মাইক শিনোডা ও রব বোর্ডনের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিলাম।
চেস্টার বেনিংটন তখনো পৌঁছাননি। বাড়ি থেকে বেরিয়েই নাকি জুতা কিনতে গেছেন। নতুন জুতা পরে স্টুডিওতে আসবেন। ভাবলাম, হয়তো আসবেনই না। কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি হাজির হয়ে হইচই জুড়ে দিলেন, নতুন জুতার আনন্দ!মাইক পরিচয় করিয়ে দেওয়ার পরও আমি চুপ করে ছিলাম। চেস্টার আমার পেটে একটা খোঁচা দিয়ে বললেন, স্যরি ম্যান, জুতাটা দরকার ছিল।“
এভাবেই চেস্টার গেঁথে রয়েছেন প্রতিটি বাংলাদেশী ফ্যান মনের কোণে!


চেস্টারের আত্মহত্যা ও একটি কালো অধ্যায়ঃ-
‘সাউন্ডগার্ডেন’ এবং ‘অডিওস্লেভ’ ব্যান্ড এর গায়ক ক্রিস কর্নেল ছিলেন চেস্টারের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। চেস্টারের ক্যারিয়ারে বিশাল অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিলেন সুহৃদ ক্রিস কর্নেল। বারংবার শ্রদ্ধার সাথে ক্রিস এর নাম উচ্চারণ করেছেন চেস্টার। অবাক করা বিষয় হচ্ছে, ক্রিস কর্নেলের ৫৩ তম জন্মদিনেই নিজের জীবনের ইতি টেনেছেন চেস্টার। সংবাদ সংস্থা সিএনএন তাদের খবরের শিরোনামে লেখে,
“Chester Bennington dies on his good friend Chris Cornell’s birthday”।
ক্রিস আর চেস্টার- দুজনের আত্নহত্যার ধরনের মধ্যেও মিল রয়েছে। দুজনেই হতাশা এবং মাদকাসক্তির ফলশ্রুতিতে আত্নাহুতি দেন। বন্ধু হারানোর যন্ত্রণা যে কতটা তীব্র হতে পারে, চেস্টার সেটা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন। নিজের জীবন দিয়ে সেটা বুঝিয়েও গেছেন বিশ্ববাসীকে। এবার পৃথিবীর রকপ্রেমীদের বোঝার পালা। যন্ত্রণায় বাস করতে করতে তাঁরা বুঁদ হয়েছেন ‘হাইব্রিড থিওরি’তে বা প্রিয় শিল্পীর অন্য গানগুলোতে
যেগুলোয় জীবন্ত চেস্টার বেনিংটন। এর পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ হতে পারে হতাশা। হতাশা এমন এক অসুখ, যার উপস্থিতি টের পাওয়া অনেক ক্ষেত্রেই অসম্ভব। লাখো ভক্তের ভালোবাসা, সাফল্য আর টাকা- কোনোটাই তাদের মানসিক শান্তি দিতে পারেনি। চেস্টার এই বিয়োগ কাঁদিয়েছে পুরো বিশ্বকে, স্তব্ধ করেছে নিঃশেষে, শোকের আলখাল্লা দিয়ে ঢেকে দিয়েছে পুরো মিউজিক জগৎকে।

স্কুলে নিয়মিত সহপাঠীদের হাতে মার খাওয়া কৃশকায় শরীরের ছেলেটি হতাশার কাছে পরাজিত হয়ে চেষ্টা করেছিল গানের কাছে আশ্রয় খোঁজার। অবশতা দূরীকরণের পন্থা হিসেবে নিয়েছিলেন সংগীতের এলোমেলো ধ্রুপদী। তাইতো আমরা শুনতে পেরেছি,
"I've become so numb, I can't feel you there Become so tired, so much more aware By becoming this all I want to do Is be more like me and be less like you"....
স্টেডিয়ামে হাজার হাজার দর্শকের সামনে মঞ্চ কাঁপানো রকস্টারের ভেতরে যে এত অভিমান জমা ছিল, তা কয়জন জানতো? পুরষ্কার থেকে ভক্তদের ভালোবাসাকেই প্রাধান্য দিয়েছেন সবসময়। ঝুলিতে গ্র্যামি এ্যাওয়ার্ড-এর মতো পুরষ্কার থাকতেও অহংকার করেননি বিন্দুমাত্র। পাকা ধানে কৃষক যেমনভাবে হাত বোলান, তেমনি নিজের হাতটাও বুলিয়ে নিতেন কনসার্টে নিজের ভক্তবৃন্দের মাঝে।


মাইক শিনোডার র‍্যাপ পার্ফরমেন্সের সাথে রোগা একজন লোক শার্টের বোতাম খুলে শ্রুতিমধুর কন্ঠে গান In the end গাইছে। হ্যাঁ, সে গায়কটা-ই আমাদের সবার প্রিয় প্রয়াত চেস্টার বেনিংটন। সে-ই আমাদের পরিচয় করিয়ে দিয়েছে হেভি মেটাল, হিপহপ, অলটারনেটিভ রক, ফাংক্‌, গ্রাংগ্‌ ঘরানা মিশ্রিত এক ভিন্ন ঘরানা, "ন্যু-মেটাল"। ওই প্রজন্ম বুঝতে পেরেছিল র‍্যাপ আর অল্টারনেটিভ রকেও অস্থির মেলোডি উপহার দেয়া যায়। চেস্টারই বুঝতে শিখিয়েছেন, অসাড়তার গন্ডিতে আবদ্ধ থাকার অনুভূতি, অনুভব করতে শিখিয়েছেন পঞ্চম মাত্রার এক জগৎকে। বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকের প্রজন্মটা বড়ই হয়েছে চেস্টারকে বুকের মধ্যে আকড়ে ধরে, চেষ্টা করেছে কর্কশ গলায় গান গেয়ে ঘাড়ের রগ ফুলানোর। ডেড বাই সানরাইজ, গ্রে ডেইজ, স্টোন টেম্পল পাইলটস; প্রত্যেকটা ব্যান্ডেই রেখে গেছেন নিজের অসামান্য প্রতিভার ছিটেফোঁটা। ২০০০ সালের শুরু থেকে তাঁর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত, তাঁকে বিশ্বের অন্যতম সেরা রক মিউজিশিয়ান বলে গণ্য করা হত। হিট প্যারাডার নাম এক ম্যাগাজিন তাঁকে " সর্বকালের সেরা ১০০ মেটাল ভোকালিস্ট" এর তালিকায় ৪৬ নাম্বারে স্থান দিয়েছে।
শিল্প যদি মানসম্মত হয়, সময় তার অস্তিত্বে চিড় ধরাতে পারে না। সংগীত জগতে "অমরত্ব" নামে একটা শব্দ টুকে রাখা আছে। চেস্টার সেটা নিজের দখলে বাগিয়ে নিয়েছেন অসংখ্য ভক্তের মন জয় করে। ভক্তদের জন্য রেখে যাওয়া গান তারা অন্তরে ধারণ করবে চিরকাল।

হয়ত, আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম যারা চেস্টার নামক কিংবদন্তিকে দেখতে পারেনি তারাও হয়তো তাঁর রেখে যাওয়া অনবদ্য সৃষ্টিগুলো দৃষ্টিগোচর করে আফসোস করবে, গুগলে সার্চ করবে "Chester Bennington" লিখে। আমরা আমাদের ছেলেমেয়েকে শোনাতে পারব এক কিংবদন্তির বীরগাথা, যার যুগ আমরা তাঁর গাওয়া গান শুনে কাটিয়েছি। একজন চেস্টারের বিয়োগ, মিউজিক ওয়ার্ল্ডে যে ক্ষতিপূরণ ঘটিয়েছে, তা এক বিরাট ক্ষত সৃষ্টি করেছে রকপ্রেমীদের হৃদয়ে। তাঁর ভুক্তভোগী আমি নিজেও। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ একজন চেস্টারের সময়ে পাঠানোর জন্য! প্রিয় গায়ক!
যেখানেই থাকুন ভালো থাকুন।💖

MARVEL এর নতুন অধ্যায় এর সূচনা, Fox এর সমাপ্তি


অবশেষে ডিজনী-ফক্স চুক্তি সম্পন্ন হলো। এক্স-মেন, ফ্যান্টাস্টিক ফোর ও অন্যান্য ক্যারেক্টাররা এখন ডিজনীর ঘরে চলে এসেছে। এতদিন তারা ফক্সের কাছে বন্দী ছিল। তাই এখন ডিজনী মার্ভেল স্টুডিও সেই ক্যারেক্টারগুলোকে নিয়ে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে মুভি বানাবে। পুরোপুরি রিবুট করে নতুন অভিনেতা এর মাধ্যমে ক্যারেক্টার গুলো উপস্থাপন করবে। সবার আগে এক্স-মেন দের মুভি আসার সম্ভাবনা বেশী। তারপর ফ্যান্টাস্টিক ফোর সিরিজ টাও প্রায় দীর্ঘসময় ধরে চলতে থাকবে। এক্স-মেন, ফ্যান্টাস্টিক ফোর দের অনেকগুলা মুভির সিকুয়্যাল বের হবে, যেগুলোতে নতুন নতুন মার্ভেল কমিকবুক ভিলেন দের আগমন ঘটাবে। এতে মুভিগুলো দারুণভাবে জমবে। তো দেখা যাক কি কি ধরণের ক্যারেক্টারগুলোকে মার্ভেল সিনেম্যাটিক ইউনিভার্সে দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা আছে, একটু ধারণ করা যাক:
আমরা অনেক আগে থেকেই শুনে আসছি, মার্ভেল সুপারহিরো "সিলভার সার্ফার" এর সলো মুভি আসবে। সেটা অবশ্য কেভিন ফাইগী কনফার্ম করেছেন, সিলভার সার্ফার এর খুব দ্রুত এমসিউতে আবির্ভাব হবে। এরপর "ওলভারিন" চরিত্রটাও রিবুট করা হবে। নতুন কোনো অভিনেতা খোজা হচ্ছে ওলভারিন এর জন্য। "গ্যাম্বিট" এর সলো মুভি ২০১৭-১৮ সালের মধ্যে আসার কথা ছিল, কিন্তু ডিজনী-ফক্স এর চুক্তির কারণে সেটার পরিকল্পনা বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু "গ্যাম্বিট" যেহেতু এক্স-মেন এর সদস্যা, তাই তাকে মার্ভেল স্টুডিওস এর মুভিতে আনা হবে।  হলিউড জনপ্রিয় অভিনেতা Channing Tatum অনেকে আগে থেকেই "Gambit" এর ভৃমিকায় অভিনয় করতে রাজি আছেন। অন্যদিকে মার্ভেল কমিক্সের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও বিখ্যাত সুপারভিলেন হলো "ডক্টর ডুম"। ডক্টর ডুম কে অবশ্য আগের ফ্যান্টাস্টিক ফোর মুভিগুলাতে দেখা গেলেও ঠিকমত উপস্থাপন করতে পারে নি। কিন্তু এবার ডক্টর ডুম কমিক অনুযায়ী যেরকম রয়েছে, একদম সেভাবেই লাইভ অ্যাকশনে ঠিকভাবে উপস্থাপন করা হবে। ডক্টর ডুম চরিত্রটা খুবই দূর্দান্ত ও Awesome Level এর। সে Thanos এর থেকেও উচ্চমাত্রার ভয়াবহ ভিলেন। এরপর অবশেষে "ফ্যান্টাস্টিক ফোর" দলটি মার্ভেল সিনেম্যাটিক ইউনিভার্সে জায়গা পেল। ফ্যান্টাস্টিক ফোর দের লিডার "রিড রিচার্ড/মিস্টার ফ্যান্টাস্টিক" কে আমরা আবারো লাইভ অ্যাকশনে দেখতে পাবো। এই মিস্টার ফ্যান্টাস্টিক কে মার্ভেল ইউনিভার্সের মধ্যে সবচেয়ে শীর্ষ স্মার্ট ব্যাক্তি ও উচ্চ লেভেলের জিনিয়াস হিসেবে ধরা হয়। "রিড রিচার্ডস/মিস্টার ফ্যান্টাস্টিক" এর মত জিনিয়াস সাইন্টিস্ট কে যত দ্রুত সম্ভব তাড়াতাড়ি মুভিতে নিয়ে আসা উচিত। খুব জোরেসোড়ে শোনা যাচ্ছে যে, অভিনেতা John Kraisinski খুব বেশী আগ্রহ নিয়ে Mister Fantastic চরিত্রে অভিনয় করতে প্রস্তুত আছেন। আর ওদিকে মার্ভেল কমিকবুকের শীর্ষ সুপারভিলেন "ম্যাগনিটো" কে আমরা এমনিতেই এক্স-মেন মুভিগুলাতে দেখে আসছি। এমনকি এবছরের "ডার্ক ফিনিক্স" মুভিতেও ম্যাগনিটো কে আবার দেখা যাবে। কিন্তু এই ভার্সনের ম্যাগনিটো কে পরবর্তীতে আর দেখা যাবে না। পরবর্তীতে সব রিবুট করা হবে, যা ম্যাগনিটো কেও নতুন অভিনেতা দিয়ে কাস্ট করাবে। আমরা অনেকেই জানি ম্যাগনিটো খুব বয়স্ক, তাই ম্যাগনিটো কে হয়তো কমিক অনুযায়ী বুড়ো বয়সের কাউকে এই চরিত্রে দেখবো। যদিও আমি চেয়েছিলাম মাইকেল ফেসবেন্ডার এই ম্যাগনিটো রুলটির জন্য থেকে যাক, কিন্তু সেটা আর সম্ভব নয়। তারপর অবশেষে আমাদের স্বপ্ন প্রায় পূরণ হতে যাচ্ছে, যার জন্য আমরা অধীর আগ্রহে আছি। তিনি হলেন "গ্যালাক্টেস"। এই গ্যালাক্টেস কে এখনো কোনো মুভিতে দেখানো হয়নি। অনেক ফ্যানরাই গ্যালাক্টেস কে লাইভ অ্যাকশনে দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। যদি "সিলভার সার্ফার" এর নিজস্ব মুভি আসে, তাহলে সেখানেই গ্যালাক্টেস এর মত ইউনিভার্সের সবচেয়ে Bigger Threat কে খুব তাড়াতাড়ি দেখা যাবে.
.
মূলত ফেজ ৪ এর পর থেকেই Marvel Cinematic Universe এর মুভিগূলোতে শুধু Cosmic, Omni Multiversal পর্যায়ের মাধ্যমে তৈরী করা হবে। ফেজ ৫ এই হয়তো Secret Wars, Secret Invansion, Annihillus এর মত বিশাল Event এর মাধ্যমে মুভিগুলো তৈরী হবে, যা কসমিক এন্টিটি দের আগমন অনবরত ঘটতে থাকবে। ফ্যান্টাস্টিক ফোর এর অনেক বেশী ফ্রান্সাইজি হবে, যেখানে সুপারভিলেন ডক্টর ডুম, উইজার্ড, ক্যাং, সুপার স্ক্রুল দের আনার সম্ভাবনা বেশী।

BORDER মুভি রিভিউ


ভেবে দেখুন মুভি জগতে কতগুলা জনরা আছে !
ড্রামা,রোম্যান্স,থ্রিলার,হরর,ফ্যান্টাসি, অ্যাকশন আরো কত কী! এখন এক কাজ করেন। এই সবগুলো জনরা একসাথে একটা মুভির মধ্যে ঢেলে দেন।তৈরী হয়ে গেল ২০১৮ সালের সুইডিশ ফিল্ম 'বর্ডার'।
ভাবছেন সবগুলো জনরার মিক্স?
কী অখাদ্য জগাখিচুড়ি মুভি কে জানে!
তবে  আপনার ধারণা একেবারেই ভুল। ‘বর্ডার’ এর মত ওয়েল ব্যালেন্সড একটা সিনেমা খুবই কম দেখেছি গত কয়েক মাসে। এক্সপেরিমেন্টাল সিনেমাগুলো নিয়ে আমার একটা ধারণা আছে,হয় সেগুলো একেবারে জঘন্য হয় না হলে সেগুলো একেবারে অনন্য হয়। ‘বর্ডার’ এ বছরের এক্সেপশোনাল  একই সাথে অনালোচিত একটা ফিল্ম।মুভির স্টোরিলাইন খুবই সুন্দর এবং সিকুয়েন্সগুলো সুন্দরভাবে পরিকল্পিত। মুভি শুরু হওয়ার পর আপনি একটা সেরেনিটির মধ্যে পড়ে যাবেন।ভিজুয়ালি এট্রাক্ট করার মত দারুণ সব দৃশ্য আছে।তবে একই সাথে রয়েছে অনেক ডিস্টার্বিং সিন। অনেক আনইউজুয়াল সেক্সুয়াল সিন আছে যা অনেকেরই হজম হবে না।তাও মুভিটা সুন্দর।প্রথম প্রথম আপনার মনে হবে কোনো ঢিলাঢালা ড্রামা দেখতে বসেছেন।সময়ের সঙ্গে কাহিনীর ভেতরকার জট যখন খুলতে শুরু করে তখন মুভিটা আরো জমতে শুরু করে।এবং মিস্ট্রি কিন্তু একটাই না, একাধিক। ড্রামা থেকে বেরিয়ে আস্তে আস্তে মুভিটা বিভিন্ন জনরায় বিচরণ শুরু করে। একই মুভির ভেতর অনেক ভিন্ন জিনিস নিয়ে আলোচনার বিষয় আছে যা অন্যান্য মুভি থেকে এটিকে আলাদা করে।

মুভির প্রোটাগনিস্ট টিনা (এভা মালেনদার) একজন সুইডিশ কাস্টম অফিসার।টিনার একটা অদ্ভুত ক্ষমতা আছে। সে কোনো মানুষের কিংবা বস্তুর গন্ধ শুঁকে কোনো অসংগতি শনাক্ত করতে পারে।মানুষের লজ্জা,অনুতপ্তবোধ কিংবা অন্যায়ের কথা বুঝতে পারে।এই কারণেই সে বুঝতে পারে প্লেনের কোনো যাত্রী ড্রাগস কিংবা অন্য কোনো কিছু বহন করছে কী না। একদিন সে এক প্যাসেঞ্জারের কাছ থেকে চাইল্ড পর্নোগ্রাফিতে ভর্তি একটি মেমরি কার্ড উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। টিনার বস তাই তাকে এই ব্যাপারে ইনভেস্টিগেট করার জন্য নিযুক্ত করে। কাহিনীর এই হল একটা পিঠ যা এখনো পর্যন্ত সব নরমাল বলেই মনে হচ্ছে।
কাহিনীর অন্য পিঠে আসা যাক, টিনা নিজে একটা রোগে আক্রান্ত। তার মুখটা অদ্ভুতভাবে বিকৃত। ক্রোমোসোমাল ডিফর্মিটির কারণে তার এই অবস্থা।তবে একদিন সে এয়ারপোর্টে তারই মত অবিকল একটি লোককে দেখতে পেল যার মুখও বিকৃত। তখনই সে লোকটার জন্য অদ্ভুত এট্রাকশন অনুভব করে।ঘটনাচক্রে লোকটার সাথে আবার দেখা হয় এবং টিনা তাকে নিজের বাসায় রেন্টে থাকার জন্য আমন্ত্রণ জানায়। টিনা থাকে জঙ্গলে ঘেরা এক আইসোলেটেড জায়গায়। এখানে সে রোল্যান্ড নামের একজন ডগফাইটারের সাথে একসাথে লিভ ইন করে।একসময় টিনা এবং অদ্ভুত লোকটির মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে।এরা নিজেদের শরীর নিয়ে বিভিন্ন মিস্টিরি জানতে শুরু করে।অদ্ভুত লোকটা সম্পর্কেও বিভিন্ন অজানা মিস্টিরিয়াস তথ্য জানতে পারে।একই সাথে এগিয়ে চলে চাইল্ড পর্নোগ্রাফির ইনভেস্টিগেশন।এভাবেই সমান্তরালভাবে দু দুটো মিস্টিরি আস্তে আস্তে আনর‍্যাভেল হতে থাকে।সে পর্যন্ত কী দাঁড়ায় সেটা নিয়েই 'বর্ডার' সিনেমা।

আপাত দৃষ্টিতে একটা সিম্পল মিস্ট্রি ফিল্ম মনে হলেও এই মুভিতে সোশ্যাল রিয়ালিজম এর অনেক ব্যাপার স্যাপার আছে। হিউম্যানিটিকে স্যাটায়ার করা হয়েছে অনেকভাবে।সঙ্গে সঙ্গে  নর্স মিথোলজির সাথে মিলমিশ খাইয়ে এমন একটা অস্থির ফ্যান্টাসি মুভির অবতারণা করা হয়েছে যে প্রশংসা না করে পারা যায় না।প্রথমদিকে একটু স্লো হলেও শেষের দিকে একটা দারুণ থ্রিল উপভোগ করতে পারবেন।তার উপর টিনা এবং তার বাবাকে নিয়ে হাল্কা পাতলা ফ্যামিলি ড্রামার ছোঁয়াও পেয়ে যাবেন।অনেক ডিস্টার্বিং সিনে পরিপূর্ণ থাকলেও শেষে একটা অদ্ভুত প্রশান্তির দৃশ্য দিয়ে মুভিটার এন্ডিং।মুভিটায়ে বিশদভাবে আলোচনা করার অনেক বিষয়বস্তু আছে,আপনি দেখলে মোটামুটি ফিল করতে পারবেন।যেহেতু রহস্য এবং টুইস্ট আছে তাই সবকিছু নিয়ে আলোচনা করার স্কোপ কম।স্পয়লার হয়ে যাবে।তবে এটা বলব যে, পুরো মুভিটাই একটা সাররিয়াল এক্সপেরিয়ান্স।
অভিনয়ের দিক থেকে অন্য সবকিছু থেকে ছাড়িয়ে গেছে এই মুভি।মূল চরিত্রে এভা মালেনদার এবং এওরো মিলানফ রীতিমতো ‘দানবীয়’ পারফরম্যান্স দিয়েছেন।সিনেমাটোগ্রাফি এবং প্রোডাকশন ডিজাইন গ্রেট।সব মিলিয়ে আলি আব্বাসির দারুণ একটা সিনেমা দাড় করিয়েছেন।যদিও সুইডেন থেকে মুভি অস্কারের জন্য পার্টিসিপেট করলেও নমিনেশন পায় নি।একমাত্র কৃতিত্ব মেক আপ এবং হেয়ার স্টাইলিং এ নমিনেশন।
মুভির ত্রুটির মধ্যে আমার চোখে যেটা লেগেছে যে একটা দুইটা টুইস্ট আন্দাজ করতে পেরেছি।তবে আমি পেরেছি বলে অন্য সবাই পারবে সেটা আমার মনে হয় না।তবে এই টপ নচ ফিল্মটা সবার আননোটিসড যেন না থেকে যায় তাই আমি রেকমেন্ড করব মুভিটা দেখতে।
হ্যাপি ওয়াচিং!

Bates Motel (American Web Series) রিভিউ




একজন মায়ের কাছে সন্তানের থেকে বড় আর কি হতে পারে?? আর সন্তানের কাছে মায়ের জায়গাটা ঠিক কোন জায়গায়??
হ্যাঁ, আজকে আপনাদের যেই সিরিজের কথা শোনাতে যাচ্ছি তা গড়ে উঠেছে একটা অন্যরকম, অদ্ভুত মা-ছেলের সম্পর্ক নিয়ে। যেটা শুধুই একটা টিনএজ ছেলের সাথে মায়ের গল্প বললে ভুল হবে। মা-ছেলের সম্পর্ক কতটা বন্ধুত্বপূর্ণ আর মধুর হতে পারে শুধু সেটা না, কখনো কখনো সেটা কতটা ভয়ানক হতে পারে সেটাই দেখবেন নরম্যান বেটসের মাধ্যমে। বিকৃত পরিবেশে বেড়ে ওঠা একটা ছেলের অসুস্থ মানসিক বিকাশ আর মায়ের ছেলের উপর আধিপত্য বিস্তারের প্রবণতা এমন ভয়ংকর হতে পারে সেটা হয়ত ছেলেটিকে বাইরে থেকে দেখে আন্দাজ করতে পারবেন না। নরম্যান কতটা ভালবেসে একসময় মায়ের অস্তিত্ব নিজের মাঝে ধারণ করে ফেলে, সেই গল্প নিয়ে এগিয়ে যাবে সিরিজটি। অত্যন্ত বিনয়ী এবং সৎ মনের ছেলেটি একসময় মানুষ খুন করতেও দ্বিধা করে না। কিন্তু কেন? এই খুনের জন্য সত্যিই কি নরম্যান দায়ী, নাকি যাকে ঘিরে তার পৃথিবী সেই মা দায়ী?
 প্রশ্নগুলোর উত্তর পেতে অবশ্যই সিরিজটির সবগুলো সিজন দেখতে হবে।

সাইকোলজিক্যাল থ্রিলারপ্রেমীদের জন্য এককথায় মাস্টারপিস মুভি বানিয়েছিলেন আলফ্রেড হিচকক। রবার্ট ব্লকের সাইকো উপন্যাস অবলম্বনে "সাইকো" (১৯৬০) মুভিটির আলোকেই এই "বেটস মোটেল"। মুভিটি যারা দেখেছেন তাদের জন্য মাস্ট ওয়াচ সিরিজ এটা৷ প্রথম ৪টি সিজনে মূলতঃ "সাইকো" মুভির পূর্বাবস্থা দেখানো হবে। মানে মুভির প্রিকুয়্যাল বলতে পারেন। আর সিজন-৫ "সাইকো" মুভিটিকেই মডিফাই করে বানানো হয়েছে। সাইকোলজিক্যাল থ্রিলারপ্রমীদের জন্য মাস্ট ওয়াচ সিরিজ এটি। তবে আমি বলব যারা "সাইকো" দেখেননি সিরিজ শুরু করার আগে "সাইকো" দেখে নিন। "সাইকো"র আরো ২টা সিকুয়্যাল মুভি আছে। সেগুলোও দেখে নিতে পারেন।

মুভির গল্পের সাথে সাথে আপনাকে যেটা সবথেকে বেশি আকৃষ্ট করবে সেটা হলো মা-ছেলের অসাধারণ অভিনয়। কাহিনীর সাথে সাথে তাদের অভিনয়ের মধ্যে আপনি ঢুকে যেতে বাধ্য। মায়ের চরিত্রে (নর্মা বেটস) অভিনয় করেছেন ভেরা ফারমিগা। "কনজুরিং"-এর বদৌলতে আমরা অনেকেই তাঁর অভিনয় দক্ষতা সম্পর্কে জানি। এখানেও তিনি খুবই সাবলীল অভিনয় করেছেন। তবে নরম্যান বেটসের চরিত্রে অভিনয় করা ফ্রেড্ডি হিফমোরে নিজেকেও ছাড়িয়ে গেছেন এই সিরিজে। শুধু তাঁর অভিনয়ের জন্যও সিরিজটা মনে গেঁথে যেতে বাধ্য করবে আপনাকে। টিনএজ বয়সেই এত সাবলীল অভিনয় এককথায় আমাকে তাঁর ফ্যান বানিয়ে দিয়েছে। সিরিজটিতে তাঁর অভিনয় কখনো আপনাকে তাঁর প্রতি করুণা জাগাবে আবার কখনো ঘৃণা। কিন্তু অভিনয়ে মুগ্ধ হবেন অবশ্যই।

আমাকে সিরিজটি এতটাই আকৃষ্ট করে ফেলেছিল যে, টানা ৬দিনেই ৫টা সিজন শেষ করে ফেলেছি!!
প্রতিটি সিজনে ১০টি করে এপিসোড। টোটাল রানিং টাইম প্রায় ৩৮ঘন্টা। তো দেরি না করে দেখে ফেলুন। আশাকরি ভালো লাগবে।
Happy watching...😊😊😊
Total season -5 (2013-2017)
Genre: Psychological thriller
IMDB : 8.2
Rotten Tomatoes : 93%

V for Vendetta Movie Review || মুবি রিভিউ


একটি অভ্যুত্থানের মহাকাব্য

দেশের যখন সংকট মুহূর্ত,যখন অন্তঃশত্রুর উল্লাস অভিযানে দেশের স্বাধীনতা ভূলুন্ঠিত,যখন রক্তচক্ষু শাসকের নির্যাতন চরমে,যখন স্বাধীনতার মোড়কে বেষ্টিত পরাধীনতার বিষজ্বালায় জর্জরিত মানুষ মুক্তি কামনায় উদ্বেল অস্থির, যখন রাষ্ট্রের শাসক নিজেই হয়ে পড়ে সর্বোচ্চ শোষক, আইনের রক্ষক যখন আবির্ভূত হয় ভক্ষকরূপে তখন রাষ্ট্রের মুক্তি হয়ে পড়ে অবশ্যম্ভাবী,সে অবশ্যম্ভাবীকে সম্ভব করতে প্রয়োজন হয় একটি বিপ্লবের, আর বিপ্লবের বীজ নিহিত থাকে একটি আইডিয়ার মধ্যে৷আইডিয়া মানে একটি স্ফূরণ,একটি জাগরণ, একটি অভ্যুত্থান৷ এই আইডিয়াই অন্ধকারের অতল গহ্বরে নিমজ্জিত জাতিকে মুক্তির আলোয় উদ্ভাসিত করতে পারে, ক্ষমতার সুউচ্চ মসনদ থেকে অত্যাচারী শাসককে টেনে হিচড়ে নামিয়ে আনতে পারে জনতার কাতারে, একটি আইডিয়াই যুগ যুগ ধরে বয়ে চলা দাসত্বের শৃংঙ্খল থেকে মুক্তি দিতে পারে, উন্মোচন করতে পারে একটি নতুন দিগন্তের, যেখানে মনুষ্যসৃষ্ট বৈষম্যের বেড়াজাল ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে,সৃষ্টি হবে ভারসাম্য৷ আর এই আইডিয়া যাঁর মস্তৃষ্ক প্রসূত, যিনি এর ধারক ও বাহক,তিনি হন একজন নেতা, একজন বিপ্লবী৷ শত বছরের অপেক্ষার পর একজন নেতার আবির্ভাব ঘটে৷ আইডিয়ার ধারক যেহেতু মানুষ তাই তাঁর মৃত্যু হতে পারে৷ কিন্তু একটা আইডিয়ার কখনোই মৃত্যু হয় না৷ আইডিয়াকে বুলেটবিদ্ধ করা যায় না,আইডিয়া অবিনশ্বর,অনন্ত-অক্ষয়,অবিনাশী৷ বেনিয়া শাসকের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে একটা আইডিয়াই প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে বাহিত হয়ে, একসময় হয়ে যায় যুগ পরিবর্তনের প্রধান নিয়ামক৷

নিকট ভবিষ্যতের ইংল্যান্ড৷ রাষ্ট্রনায়ক সাটলার পাড় করছেন ক্ষমতার চূড়ান্ত সময়৷ বাহ্যিক দৃষ্টিতে মনে হয় উন্নতির চরম শেখরে অবস্থান করছে দেশ৷ কোথাও অশান্তি,বিশৃংঙ্খলা নেই৷ সর্বত্র বিদ্যমান সুখ আর সমৃর্দ্ধি কিন্তু রাষ্ট্রের ভেতরকার রূপ ঠিক উল্টো৷ সে রূপ বিভৎস আর কদর্যতায় পূর্ণ৷ নাগরিকদের নিরাপত্তা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান নিজেই হরণ করছে নিরাপত্তা৷ নিরাপরাদ মানুষদের ধরে নিয়ে করা হচ্ছে অমানিক পরীক্ষণ,ধর্মকে হাতিয়ার করে চলছে স্বৈরাচারের ভিতকে শক্ত করার পায়তারা,রাষ্ট্রযন্ত্রের বিপরীত চিন্তাধারীকে যেতে হচ্ছে দমন-পীড়ণের মধ্য দিয়ে এমনকি তাদেরকে হত্যা করতেও কুন্ঠিত হচ্ছে না শাসকগোষ্টী৷ বহুবছর ধরে চলা এ শাসন ব্যবস্থায় রাষ্ট্র যেন নিজেই অভ্যস্থ হয়ে পড়েছে, মানুষের মননে  জং ধরে গেছে, মূক-বধির জনতার ব্যক্তিসত্ত্বা হয়ে পড়েছে ভোতা, রাহুগ্রস্থ মানুষ জীবন ধারনকেই মনে করছে অভিষ্ট লক্ষ্য৷ এমন অসার,জড়তাগ্রস্থ সিস্টেমে জমা হওয়া আবর্জনার স্তুপ ধোয়ে-মুছে সাফ করার জন্য, বহুবছরের পুরনো একটি আইডিয়া ধারণ করে, মুক্তির পয়গাম নিয়ে হাজির হন একজন ত্রাণকর্তা,A man under mask. মুখ তাঁর মুখোশে আর সারা দেহ তার কালো আলখাল্লায় ঢাকা৷

এ বেশেই তিনি রাষ্ট্র সংস্কারের মিশনে নামেন৷ সম্পূর্ণ একা আর নিঃসঙ্গ অবস্থায়৷  রাষ্ট্রের কিছু দুর্নীতিবাজ,লম্পট অফিসারদের লোলুপ দৃষ্টি থেকে একটি মেয়েকে বাঁচানোর পর,তাঁর কিম্ভুতকিমাকার সাঁজ দেখে বিস্ময় নিয়ে মেয়েটি যখন জানতে চায়, Who are you? তখন তিনি বলেন," Who? Who is but the form following the function of what and what I am is a man in a mask. একটা ছোট মনোলগের মাধ্যমে তিনি যখন নিজ পরিচয়ের বর্ণনা দেন তখন বিস্ময় নিয়ে মেয়েটি তাঁর দিকে তাকিয়ে থাকে,বিস্ময়ের শেষে তাঁর নাম জানা যায় "V"৷

V একটি রূপক, প্রতীকী নাম৷ এই নামের পেছনেও রয়েছে ইতিহাস৷ সে ইতিহাস নৃশংসতার, লোমহর্ষক আর ভয়ংকরের৷  অত্যাচারের সর্বোচ্চ সীমা থেকে বেঁচে ফেরা এক নির্যাতিতের বক্ষে দ্রোহের অনল নিয়ে জেগে উঠার গল্প৷কারাগারে এক ভয়াবহ এক্সপেরিমেন্টের মুখ থেকে কাকতালীয়ভাবে বেঁচে ফেরার গল্প৷ আত্মপরিচয়ের মনোলগে সে প্রায় চল্লিশটি V দ্বারা গঠিত শব্দের মাধ্যমে নিজের পরিচয় দেয় ৷ মুভির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত রোমান হরফ V মানে পাঁচের ছড়াছড়ি৷ এমনকি ছিলো Faust থেকে নেয়া বিখ্যাত ডায়লগ, 'Vi Veri Veniversum Vivus Vici'. V কে যে কারাগারে থেকে অমানবিক পরীক্ষনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছিল সেটার নাম্বার ছিলো পাঁচ বা রোমান অক্ষর V.

আলোচিত সিনেমার নাম V for vendetta. এটি শুধু একটি সিনেমা নয়,এটি একটি বিপ্লবের মহাকাব্য৷এ মহাকাব্যের সূচনা হয় নারী কন্ঠে আবৃত্তি করা একটি কবিতার মাধ্যমে,

Remember, remember,
the fifth of November,
the Gunpowder Treason and Plot;
I know of no reason,
why the Gunpowder Treason,
 should ever be forgot.

গান পাউডার ট্রিজন, বিপ্লবের পেছনের ইতিহাস,গল্পের পেছনের গল্প৷সালটা ছিল ১৬০৫৷ ব্রিটেনজুড়ে চলছে রাজা প্রথম জেমসের শাসন৷ খ্রীষ্টধর্মের তিনটি শাখার একটি হলো ক্যাথলিক৷ এসময় ক্যাথলিকদের উপর নেমে আসে অত্যাচারের খড়গহস্ত৷ ক্যাথলিক নিধন চলতে থাকে নির্বিচারে৷ ক্যাথলিকদের মনে রাজপরিবারের বিরুদ্ধে বিন্দু বিন্দু ক্ষোভ জন্মাতে শুরু করে একসময় তা সিন্ধুর আকার ধারণ করে৷ দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে মানুষ যা করে,সেটাই হলো৷ জন্ম দিল একটি আইডিয়া৷ গানপাউডার দিয়ে পুরো পার্লামেন্ট ভবন উড়িয়ে দেয়ার আইডিয়া ৷ এ গল্পের নায়ক দুজন, গাই ফকস আর রবার্ট ক্যাটসবি৷ ধার্য করা হলো পাঁচই নভেম্বর বাস্তবায়ন করা হবে আইডিয়া৷ পরিকল্পনা মোতাবেক গাই ফকস গান পাউডার আর শুকনো কাঠ নিয়ে উপস্থিত হন ঘটনাস্থলে৷ কিন্তু বিশ্বাসঘাতকতার দরুণ রাজপরিবার জেনে যায় ঘটনাটি৷ হাতে নাতে ধরা পড়ে গাই ফকস৷ এ অপরাধে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয় গাই ফসকসের আর গুলি করে হত্যা করা হয় রবার্ট ক্যাটসবিকে৷ আপাত দৃষ্টিতে একটি আইডিয়ার মৃত্যু হতে দেখা যায়, একটি অভ্যুত্থান ব্যর্থ হতে দেখা যায়৷ কিন্তু আইডিয়ার মৃত্যু নেই, সময়ের প্রয়োজনে সে প্রবল বেগে ধেয়ে আসে দুর্নীতিগ্রস্থ রাষ্ট্রযন্ত্রকে নির্মূল করে দিতে৷ সিনেমার নায়ক V সে তেজে তেজোদীপ্ত একজন প্রতিবাদী৷

 সিনেমার প্লট মূলত একই গঠনাকে উপজীব্য করে ১৯৯০ বের হওয়া এলান মুরের V for vendetta কমিক সিরিজের অনুকরণে তৈরী৷ DC Comics এর এই সিরিজের গ্রাফিকস আর্টিস্ট ছিলেন ডেভিড লয়েড৷ V এর মুখোশের পেছনের কারিগরও তিনি৷ এই মুখোশটা তখন খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল এবং রাষ্ট্রযন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ভাষা হয়ে উঠে৷ সিনেমার প্লট কমিকসের প্লট থেকে কিছুটা ভিন্ন৷ সিনেমা দেখার পর এলান মুর পরিচালকের প্রতি এতোটাই বিরক্ত ছিলেন স্টোরি রাইটার থেকে নিজের নামটা পর্যন্ত প্রত্যাহার করে নেন৷ এলান মুর সিনেমা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেও লক্ষ কোটি সিনেপ্রেমীর চোখের মণি হয়ে আছে V for vendetta.

সিনেমার শুরুতেই বিস্ফোরণের মাধ্যমে আদালত ধ্বংস করে রাষ্ট্রযন্ত্রের নিকট নিজের অস্তিত্বের জানান দেয় V. এতে সন্ত্রস্থ হয়ে পড়ে রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারকেরা৷ স্বৈরাচারী সাটলার ঘোষণা দেয়, যে করেই হোক ধরতে হবে এ আতঙ্কবাজকে৷ দায়িত্ব পড়ে হেড অব পুলিশ ক্রিডি এবং ফিঞ্চের উপর৷ V কে খোঁজতে শুরু হয়ে যায় চিরুণী চল্লাশী৷ এদিকে হঠাৎ একদিন রাষ্ট্রীয় টিভি চ্যানেলকে জিম্মি করে V একটি ভিডিও বার্তা প্রচার করে৷ এতে নির্জীব হয়ে পড়া জনগনকে গান পাউডার ট্রিজনের কথা মনে করিয়ে রাষ্ট্রযন্ত্রের দুর্নীতি আর স্বৈরাচারের চিত্র তুলে ধরে ভোতা হয়ে যাওয়া চিন্তা শক্তিতে গতিসঞ্চারের আহবান জানান৷ ব্রিটেনের জনগনের অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রাম আর যুদ্ধের ইতিহাস স্মরণ করিয়ে দিয়ে জনতাকে কলুষণের বিরুদ্ধে পরিবর্তনের ডাক দেন৷ সেজন্য তিনি পরের বছরের পাঁচই নভেম্বর পার্লামেন্ট ভবণ উড়িয়ে দেবার বার্তা দেন৷ এ বার্তা জনমনে সুপ্ত প্রতিবাদের ঘিয়ে আগুন লাগিয়ে দেয়৷ পরিবর্তনের এ ডাক আলোড়িত করে তাদের৷ দিন চলে যায়,এগিয়ে আসে পাঁচই নভেম্বর৷ এদিকে V থাকে ধরাছোঁয়ার বাহিরে৷ ফলে স্বৈরশাসকের আতঙ্ক অবস্থান করে চূড়ান্তসীমায়৷ নিছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয় পার্লামেন্ট ভবণের চারদিকে৷ পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনীকেও নামিয়ে দেয়া হয় মাঠে৷ এতো প্রতিকুলতার মধ্যে কি V পারবে তার এতোদিনের প্ল্যান সফল করতে?
জানতে হলে দেখতে হবে V for Vendetta সিনেমাটি৷

সিনেমার সবচেয়ে শক্তিশালী দিক তার সংলাপ৷ লিখে বাঁধাই করে রাখার মতো বহু সংলাপ আছে৷

”People shouldn’t be afraid of their government, Governments should be afraid of their people ”

"Everybody is special. Everybody. Everybody is a hero, a lover, a fool, a villain. Everybody. Everybody has their story to tell ”

” Happiness is the most insidious prison of all.”

কালো আলখাল্লায় দেহ আর মুখোশে মুখ ঢেকে পুরো সিনেমা জুড়ে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন V চরিত্রে হিউগো ওয়েভিং৷ একজন অভিনেতার সবচেয়ে শক্তিশালী দিক হলো অভিনয়ের সময় মুখের অভিব্যক্তি৷ কিন্তু এই অভিব্যক্তি প্রকাশের কোন সুযোগই ছিল না ওয়েভিংয়ের৷ সে অভাবটা বোধ হতে দেবেই না তাঁর কন্ঠ৷ জাদুকরী কন্ঠে ডায়লগ ডেলিভারি করে সম্পূর্ণ সিনেমা মাতিয়ে রেখেছেন তিনি৷ এ সিনেমায় অভিনয় করে অভিনয় সত্তাকে নিয়ে গেছেন এক অনন্য উচ্চতায় যেখানে দর্শক মন্ত্রমুগ্ধের মতো পর্দায় তাকিয়ে দেখা ছাড়া অন্য উপায় নেই৷
নাটালি পোর্টম্যান সমদক্ষতায় অভিনয় করে গিয়েছেন ওয়েভিংয়ের সাথে৷ সিনেমায় তাকে দুটি আলাদা লুকে দেখা যায়৷ প্রতিটি লুক আলাদা সত্তাকে বহন করে৷ সিনেমার পট পরিবর্তনে রয়েছে সত্তাদুটোর সম পরিমান ভুমিকা৷
সিনেমার আরেকটি শক্তিশালী দিক স্ক্রিনপ্লে৷ একটু সময়ের জন্যেও বোরিং লাগবে না এই স্ক্রিনপ্লের কারণে৷ ঘটনার পর ঘটনার উপস্থিতির যে নিরবিচ্ছিন্নতা,তা সিনেমাকে টান টান উত্তেজনায় রাখে পুরো সময়৷ সিনেমার পরিসমাপ্তি এনে দেবে তৃপ্তির ঢেকুর৷
সময়ের ব্যবধানে প্রতিটি রাষ্ট্রেই একজন করে V এর জন্ম হয়৷ অত্যাচারী ক্ষমতাধরের টুটি চেপে ধরে জনতার অধিকার ফিরিয়ে দিতে যুগে যুগে তাদের আবির্ভাব এক সজীব প্রফুল্লের বার্তা বয়ে আনে৷ ক্ষনজন্মা সেসব নায়কদের পদতলেই রচিত হয় ইতিহাসের নতুন অধ্যায়৷