Know info before watch, but no Spoiler

Once Upon A Time In America (1984) Movie Review

Once Upon A Time In America (1984)

সার্জিও লিওনি! ইতিহাসের অন্যতম সেরা সিনেমা পরিচালকদের একজন। “ডলার'স ট্রিলজি” থেকে সার্জিও লিওনি আত্মপ্রকাশ করে পরিপূর্ণরূপে, যদিও তার নির্মিত প্রথম সিনেমা “They Stole A Tram” মুক্তি পায় ১৯৫৪ সালে। তার পরিচালিত ১১ টি সিনেমার মধ্যে ৫ টি নির্মিত হয়েছে ওয়েস্টার্ন ধারায়, যার প্রতিটি সিনেমা দর্শকনন্দিত হয়েছে, যার ধারা এখনও অব্যাহত রয়েছে। এটি লিওনি'র নির্মিত শেষ সিনেমা।

হ্যারি গ্রে এর “The Hoods” উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত এই সিনেমাটি ১৯৮৪ সালে ইতালিতে মুক্তি পায়। সিনেমাটি ৮৯৪ টি থিয়েটারে মুক্তি দেওয়া হয়। ২০ মিলিয়ন বাজেটে নির্মিত ২২৯ মিনিটের সিনেমাটি বক্স অফিসে মাত্র ৫.৩ মিলিয়ন আয় করতে সক্ষম হয়। বক্স অফিস ফ্লপ্ড! সিনেমাটি নির্মানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ২৬ টি লোকেশন ব্যবহার করা হয়। IMDb এর ৭০ নাম্বার পজিশনে থাকা সিনেমাটি এক এবং অদ্বিতীয় সিনেমা হিসেবে অডিয়েন্স এবং ক্রিটিক্সের কাছে বর্তমানে সমাদৃত হয়েছে।

বন্ধুত্ব, প্রেম, বিশ্বাসঘাতকতা এসব নিত্য-নৈমিত্তিক ঘটনা। তবে সিনেমায় এর রহস্যময় উপস্থাপন, সে তো কালে-ভদ্রে পরিলক্ষিত হয়। সার্জিও লিওনি এমনটাই করে দেখিয়েছেন এই সিনেমায়। সিনেমাটি Drama, Crime ক্যাটাগরীভুক্ত করা হলেও, এটি মূলত Psychological Drama, Crime Thriller পর্যায়ভুক্ত। কপোলা'র “The Godfather” এর মতো লিওনি'র এই সিনেমাটিও গ্যাংস্টার তৈরীর দৃষ্টান্ত বহন করে। এক অর্থে দুটি সিনেমাকেই তুলনা করা যায় এভাবে যে, প্রতিটি সিনেমা ই  আমেরিকায় তৎকালীন উঠতি পুঁজিবাদ এবং নতুন স্বপ্নে বিভোর হয়ে গড়ে ওঠা সন্ত্রাসবাদকে নির্দেশ করেছে। তবে “The Godfather” থেকে লিওনি'র এই সৃষ্টির সৃজনশীলতা কোথায়?

সিনেমায় প্রধান চরিত্রে ছিলেন রবার্ট ডি নিরো। স্কোরসিজি'র “Taxi Driver” এবং “Raging Bul” এর পরে নিরো এই সিনেমায় তার সেরা অভিনয় প্রদর্শন করেছেন। একইসাথে রহস্যময়, একশন এবং এডাল্ট সিকুয়েন্স গুলোতে তিনি ছিলেন দুর্দান্ত। সহ-অভিনেতা হিসেবে জেমস উডস ছিলেন অতুলনীয়। এছাড়া এলিজাবেথ ম্যাকগভার্ন এবং জো পেস্কি তাদের অভিনয়ে ছিলেন মনোমুগ্ধকর।

ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক, সাউন্ড কম্বিনেশন, একশন, সিনেমাটোগ্রাফি, কস্টিউম, এডাল্ট সিন, স্ক্রিনপ্লে এসবের এক অনন্য মিশ্রন ঘটিয়েছেন লিওনি। বরাবরের মতোই স্ক্রিনে চোখ লেগে থাকার জন্য সৃজনশীল এই স্রষ্টা তার সৃষ্টিকে করেছেন সাফল্যমন্ডিত। প্রায় ৪ ঘন্টার এই মুভিটি আপনাকে পরিপূর্ণ তৃপ্তি দিতে পারবে এতটুকু বলাই যায়।

Plot Summary:- অন্ধকার কক্ষ, একলা রমনী। হঠাৎ আলোর আবির্ভাব, ক্লান্ত রমনীর মুখাবয়ব। হঠাৎ তিন আগন্তুকের প্রবেশ, প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষে হত্যা। টেলিফোনের উৎকট শব্দ! ঘুম ভাঙে নুডলস এর। বৃষ্টিস্নাত অবস্থায় পুলিশের সাইরেন, ৩ টি লাশ। টেলিফোন বেজেই চলছে। কফিনাকৃতি বিশাল কেক পরিবহন করছে চারজন। কফিনের গায়ে লেখা “Prohibition”. সময়কাল ১৯৩৩। হঠাৎ করেই বয়স্ক নুডলস অবতীর্ন হন। ধাবিত হন তার নিজস্ব পথে। হঠাৎ করেই আবার পিছুটান, নুডলস ফিরে যায় তার শৈশবে। ছোট নুডলস এবং তার সঙ্গীদের অপরাধের চিত্র! নানা উপায়ে অর্থ সংগ্রহ করে ছোট গ্যাংস্টার গ্রুপ।

অত্যন্ত দুঃখবোধ হচ্ছে এটা ভেবে যে, আসলে সিনেমার প্লট তুলে ধরার সামর্থ্য আমার নেই। বিশাল দৈর্ঘ্যের এই সিনেমার নির্মানে ৪ টি সময়কাল তুলে ধরা হয়েছে। অগ্র-পশ্চাৎ-বর্তমান নিয়ে তুলে ধরা স্ক্রিনপ্লে যে কাউকে চমকে দিতে প্রস্তুত। বস্তুত “Once Upon A Time In America” সিনেমাটির তুলনা চলে শুধুমাত্র লিওনির অন্যান্য সৃষ্টির সাথে। লিওনি তার সততা, নিষ্ঠা এবং তীব্র আবেগ মিশ্রিত করেছেন চলচিত্রটি নির্মানে। ক্যামেরার অ্যাংগেল মাঝে মাঝে ইতালিয়ান মেলোড্রামা ভঙ্গির। যৌনতার দৃশ্যগুলি যেনো কৈশোরের আবেগভরা দৃষ্টি থেকে তৈরী, সেগুলো প্রচন্ড অসহ্যনীয়। তবে শেষে এসে সিনেমাটি তৈরী করেছে এক সাইকোলজিক্যাল প্রেসার। শেষ চমকের জন্য এটাকে মাস্টারপিস বললেও কম হয়ে যায়।

সিনেমাটি আপনি দেখুন কিংবা নাই-বা দেখুন, কিন্তু এটা আপনি অবশ্যই স্বীকার করতে বাধ্য হবেন যে, এমন সিনেমা দ্বিতীয়টি তৈরী করা সম্ভব নয়।

Memories of Murder (2003) Movie Review || মুভি রিভিউ

Memories of  Murder  (2003)

সাইথ কোরিয়ানরা তাদের মুভি দক্ষতায় দিনে দিনে ওয়ার্ল্ড মুভি লাভারদের মন জয় করে নিয়েছে। তাদের মুভির গল্পে আপনি একটু একটু করে ঢুকবেন আর শেষ করবেন একরাশ মুগ্ধতার ঢেকুর তুলে। এককথায় কোরিয়ানরা দর্শকের মন ব্রেন নিয়ে খেলতে জানে।

Memories of Murder মুভির পটভূমি তৈরী হয়েছে একটি সত্য ঘটনাকে কেন্দ্র করে। ১৯৮৬-১৯৯১ তে দক্ষিন কোরিয়ার একটি ছোট্ট প্রদেশে ঘটে যায় বেশ কয়েকটি অনাকাঙ্খিত ঘটনা। ঐ সময়ে হত্যা হতে থাকে একের পর এক মেয়ে। উদ্ভব হয় এক ভয়ঙ্কর সিরিয়াল কিলার এর।

মুভির শুরুটা হয় অল্পবয়স্ক এক নারীর মৃতদেহ খুঁজে পায় পুলিশ মাঠে সেটি দিয়ে।কোন ক্লু বা তথ্য কিছুই থাকে না। ঐ নারীকে মূলত ধর্ষন করে হত্যা করা হয়। পুলিশ যখন এই হত্যার রহস্য উন্মোচনে ব্যস্ত ঠিক তখনই একই জায়গায় আরেকটি ধর্ষিত নারীর মৃত দেহ।এবং এই দুটো খুনের মধ্য একধরনের মিল খুঁজে পায় পুলিশ।কি ধরনের মিল পায় পুলিশ তা আপনারা দেখলেই বুঝবেন…। এই খানে মফঃস্বল পুলিশের ভূমিকায় আশানুরূপ সাফল্য না পাওয়ায় সিউল থেকে এক গোয়েন্দাকে তলব করা হয়। মুভির মাঝে তথ্য প্রমাণ সংগ্রহের বেশ সময় আমরা বেশ কয়েকটি হাস্যরসাত্মক উপাদান খুঁজে পাবো।মোট কথা এই মুভিটি তে ড্রামা,রহস্য,কমেডি,ইমোশন সবই আছে।সেই শহুরে ডিটেকটিভ আর মফস্বলের ডিটেকটিভের মধ্য অন্তদ্বন্দ্ব আমরা এই খানে দেখতে পাবেন প্রবল,অনেকটা যেন আমাদের বাস্তব জীবনেই যেন অংশ। এরই মধ্য খুনি খুন করে আরো এক নারীকে।ডিটেকটিভদের তখন মাথা পাগল অবস্থা…নেই কোন ক্লু,নেই কোন সাক্ষি।এটা দেখে সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের লোকাল সিরিয়াল কিলার রসু খাঁর কথা মনে পরে গেল। সময় অতিবাহিত হওয়ার সাথে সাথে ডিটেকটিভরা আরো সতর্ক হওয়ার চেষ্টা করলো। এমন হতে হতে তারা একটা ক্লু পেলো..খুনি একটি নিদিষ্ট সময়ে খুন করে..এবং খুন করার আগে সে রেডিওতে একটা নিদিষ্ট গানের রিকোয়েস্ট পাঠায়।অনেকটা কাকতালীয় হলেও তারা এই তথ্য নিয়ে খোঁজা শুরু করে খুনিকে। ঠিক সময় অতিবাহিত হওয়ার সাথে সাথে,শহুরে ডিটেকটিভ এক নারী কে খুঁজে পায় যাকে কিনা খুন করেনি ঐ খুনি। সে তার কথা রেকর্ড করে এবং একটা তথ্য পায়,যে খুনির হাত মেয়েদের মত নরম। এরই মাঝে ঘটে যায় আরো কিছু ঘটনা…পুলিশ সন্দেহের বশবর্তী হয়ে গ্রেফতার করে এক ব্যাক্তিকে চরম এক শ্বাসরুদ্ধ কর পরিস্থিতিতে। আবার সেই রেডিওর গানের সূত্র ধরে ডিটেকটিভরা গ্রেফতার করে এক ব্যক্তিকে যে কিনা আবার সামরিক বাহিনী হতে ফেরত।এবং তারা দেখতে পায় তার হাত অনেক নরম,ঠিক যেন মেয়েদের মত।কিন্তু তাদের কাছ কোন ক্লু নেই এই ব্যাক্তিকে আটকে রাখার জন্য।এক সময় তারা তাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। এরই মাঝে ঘটে আরো একটি হত্যাকান্ড।ডিটেকটিভ নিশ্চিত থাকে যে এই ব্যক্তিই খুনি। তারা তার DNA টেষ্ট করানোর জন্য চেষ্টা করে কিন্তু এই পরীক্ষার ব্যবস্থা তখন সেখানে ছিলনা বিধায় তারা পরীক্ষার সব উপকরন আমেরিকায় পাঠায় এবং ঐ ব্যক্তিকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। অনেকটা সময় অতিবাহিত হয়…শহুরে ডিটেকটিভ ফলো করতে থাকে ঐ সন্দেজনক ব্যক্তিকে এবং একদিন বৃষ্টির রাত আসে এবং রেডিওতে সেই গান বাজে। ডিটেকটিভ তখন পাগলপ্রায় খুনীর পিছু নিতে।কিন্তু পারে না। ঐ দিন খুন হয় আরো এক কিশোরী। অনেকটা উন্মাদ হয়ে শহুরে ঐ ডিটেকটিভ হামলে পড়ে ঐ ব্যক্তির উপর। এর মধ্যে চলে আশে DNA টেস্টের রিপোর্ট। কিন্তু কি কি ছিলো সেই রিপোর্টে? জটলা কি খুলবে?

” Memories Of Murder ” পরিচালক Bong Joon-ho এর ২য় ছবি এবং এ ছবি তাকে A লিস্টেড কোরিয়ান পরিচালকদের তালিকায় নিয়ে যায়। সে ২০০০ সালে এ ছবির কাজ শুরু করলেও প্রথম ৬ মাস স্ক্রিপ্ট লেখাও শুরু করেন নি ,শুধু মার্ডার সম্পর্কিত তথ্য কালেক্ট করে গেছেন। এ থেকেই বোঝা যায় এ মুভি তৈরির আগে কতটা রিসার্চ করা হয়েছে।

ছবির প্রধান দুই অভিনেতা ছিল Song Kang-ho আর Kim Sang-kyung। একজন গ্রাম্য ডিটেকটিভ ( মারামারিতে,শামানিজম এ বিশ্বাসী ) আরেকজন শহুরে ডিটেকটিভ ( information,document এসবে বিশ্বাসী ) .পুরো মুভিতে তাদের খুনসুটি আর সময়ের সাথে সাথে চরিত্রের transformation দারুন লেগেছে।বিশেষ করে গ্রাম্য ডিটেকটিভ চরিত্রে Song Kang-ho এর অভিনয় ছিল একেবারে চোখ ধাধানো। এ দুর্দান্ত অভিনয়ের জন্য সে ওই বছর Grand Bell Award , Chunsa Film Awards , Korean Film Awards সহ প্রায় প্রতিটি Award ceremony এ Best Actor এর Award জিতে নেয়।
Memories of  Murder  (2003)

এ ছবি মুক্তির পরে critical and commercial , দুই দিক থেকেই প্রচুর acclaim পায়। ২০০৩ সালের দক্ষিন কোরিয়ার সবচেয়ে ব্যবসাসফল ছবি ছিল এটি। আর সে বছর কোরিয়ার প্রায় সব award এর সেরা ছবির পুরস্কার জিতে নেয় এ ছবি। বর্তমানে IMDB এর টপ ২৫০ এর list এ এই মুভি রয়েছে এবং দক্ষিণ কোরিয়ার অন্যতম সেরা ছবি হিসেবে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি পেয়েছে।

Tumbbad Movie Review || টুম্বাত মুভি রিভিউ


মুভি সম্পর্কে লিখতে গেলে সর্বপ্রথম যে জিনিসটা সামনে আনতে হবে সেটা হলো মুভির জনরা, মুভির জনরা কি? হরোর ফ্যান্টাসি ঘরানার এই মুভিটি সচারাচর হরোর উপাদানকে উপেক্ষা করে আপনাকে দিয়েছে এক ব্যতিক্রম কনসেপ্ট। মুভির শুরুর মিথকে যদি কোনো হিস্টোরির সাথে মিলিয়ে আপনি জনরা নির্ধারণ করতে যান তখন হরোর ফ্যান্টাসির সাথে হিস্টোরিক্যাল পিরিয়ড ড্রামার মিশেলে তৈরী মুভিটি, মুভির শুরুর মিথ কোনো হিস্টোরির সাথে মিলে কিনা, এই প্রশ্নের উত্তরে বলতে হবে, হিন্দুত্ববাদে এমন কোনো মিথ না পাওয়া গেলেও গ্রিকত্বত্ত্বে কিছুটা মিল পাওয়া যায়।

স্টোরিঃ-
মুভিটি দুবার শুট করা হয়েছে, এর আগে বছর ছয়েক আগে মুভিটিকে শুট করা হয় বাট ডিরেক্টর যে জিনিসটাকে উপস্থাপন করতে চেয়েছে সেটা সেই শুটে উঠে আসেনি, তাই তিনি নতুন স্ক্রিপ্টে আবারো শুট করেন। মুভিটিকে ৩টি কালে বিভক্ত করেছেন পরিচালক, খোলা চোখে মনে হবে "লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু" এই প্রবাদকে কেন্দ্র করে মুভির কনসেপ্ট এগিয়েছে। ১ম অধ্যায় এগিয়ে যায় ১৯১৮ সনের তুম্বাড় গ্রামের এক ফ্যামেলিকে কেন্দ্র করে, যেখান থেকে পরিবারটি পথ মাড়ায় অন্য দিকে। ২য় পর্বে দেখানো হয় ১৫ বছর পর প্রধাণ চরিত্রের আবারো সেই তুম্বাড়ে গমন, এবং লাস্ট অধ্যায়তে দেখতে পাই মূল চরিত্র তার ফ্যামেলির ভবিষ্যৎ নির্ধানের যুদ্ধ। এ গল্প যেনো এক অনন্য আর্ট, যেখানে ফ্যান্টাসি, হরোর, ড্রামা সবকিছুকে নিয়ে এসেছে।

চরিত্রঃ-
মেইন চরিত্র ভিনায়কের প্রাপ্ত বয়সের ক্যারেক্টারে যে অভিনয় করে সে হলো সোহান শাহ, এতো দারুন ও সাংঘাতিক অভিনয় অন্য কারো পক্ষে সম্ভব হতো কিনা জানা নেই, বডিল্যাঙ্গুয়েজ থেকে শুরু করে প্রতিটা সংলাপ ছিলো অসাধারণ, দৃঢ় এক লোভী পৌরষ কে যেভাবে প্রেজেন্ট করেছে সত্যিই অতুলোনীয়, আর ভিনায়কের ছোটো বেলার চরিত্র ও তার ভাইয়ের চরিত্র এবং ভিনায়কের ছেলের চরিত্রে যে শিশুগুলা ছিলো, তারাও নিজেদের বেস্টটা দিয়েছে, অসাধারণ বললেও কম হবে। সাবলিল ও পর্যাপ্ত অভিনয় ছিলো পুরো মুভিজুড়ে। আরেকটা জিনিস আপনি জানলে আপনার চোখ আসমানে উঠে যাবে, ভিনায়কের ছেলের চরিত্রে যে ছেলেটা অভিনয় করে, ভিনায়কের দাদির চরিত্রে সেই অভিনয় করে, আমি ওর ফ্যান হয়ে গেছিরে। মোহাম্মাদ সামাদ ওর নাম, কতোটা ট্যালেন্টেড হলে এটা সম্ভব ভেবে দেখেছেন? সেরা সেরা।

ঘটনাপ্রবাহ/পরিবেশঃ-
এই এখানেই পরিচালক এক অনন্য আর্টের পরিচয় দিয়েছেন, মুভিটা হরোর, বাট কোনো ভীতিকর কিছু পাবেন না মুভির শুরু থেকেই, বাট ডিরেক্টরের স্ক্রিনপ্লেই এতো অসাধারণ ছিলো যে, কিছু না দেখেও অজানা এক ভীতি সবসময়ই আপনার মধ্যে কাজ করবে, ভিনায়কের দাদীমা এক আশ্চর্য ক্যারেক্টার ছিলো পুরো মুভিতে, মুভির শুরু থেকে বদ্ধ ঘরে বন্দী থাকে, বাট পরিবারের সবার মাঝে তার ভীতিটাকে এমনভাবে প্রেজেন্ট করেছেন পরিচালক যে অডিয়েন্সদেরও গা ছমছম করে উঠবে, এরপর যখন দাদীমাকে প্রথম স্ক্রিনে আনা হয়, আপনি শিউরে উঠবেন নিশ্চিত, এবং স্তব্ধ হয়ে যাবেন, সে এক সাংঘাতিক পরিস্থিতি, এরপর সেই ব্রিটিশ আমলকে এতো সুন্দরভাবে স্ক্রিনে আনেন যেনো ডিরেক্টর আর্টের কারিগর। লাস্টের ঘটনাপ্রবাহ আপনাকে এমন আজিব ঘটনার মুখোমুখি করবে যেটা হয়তো আপনি ভেবে পাবেন না এখন।

সিনেমাটোগ্রাফীঃ-
মুভির মূল শক্তি ছিলো এই সিনেমাটোগ্রাফিতে, আপনি এই মুভিটাকে গভীরভাবে দেখলেই বুঝবেন আসলে দারুন সিনেমাটোগ্রাফি একটা সিনেমাকে কোন লেভেলে নিয়ে যেতে পারে, একদম শুরুর তুম্বাড় শহরকে যেভাবে প্রেজেন্ট করা হয় তা ছিলো নয়নাভিরাম, সিনেমাটোগ্রাফার পংকজ কুমার, নিঃসন্দেহে তার ক্যারিয়ারের অন্যতম একটি সেরা কাজ আমাদের উপহার দিয়েছেন। গা ছমছম করে তোলা তুম্বাড় গ্রামের এমন নিরিবিলি, বৃষ্টিস্নাত ও অন্ধকারচ্ছন্ন পরিবেশ, মুভির প্রতিটি দৃশ্যে, বিশেষত ভিনায়কের বেড়ে উঠা বাড়ি, বিভিন্ন অংশে আবাসস্থলে যে থমথমে ভাব বজায় ছিল, তা আপনাকে কোনো রকম ভূত-পেত্নীর আগমন ছাড়াও  অস্বস্তিকর ও ভীতিকর করে ছাড়বে তার উপর সিনেমার ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর পরিস্থিতিকে আরও গাম্ভীর্যপূর্ণ করে তুলেছিল। কিছু দৃশ্যের অভূতপূর্ব কাজ একদম পিলে চমকে দেবে আপনাকে। এসবই ছিলো ডিরেক্টর ও সিনেমাটোগ্রাফির যৌথ কেলমা। তবে সিনেমাটোগ্রাফার না হলে এসব সম্ভব হতোনা।

নাহ, রিভিউকে আর বড় করবোনা, শুরু থেকেই ইচ্ছা ছিলো রিভিউকে সংক্ষেপ করবো, বাট মুভিটা আমাকে এতোটাই মুগ্ধ করেছে যে, বড় হয়ে গেলো, আরো তিন ডবল করলেও মুভি নিয়ে আমার অভিব্যক্তি শেষ হবেনা। এক কথায় বলতে গেলে মুভিটি ছিলো বলিউডের হরোর মুভির এক অনন্য সৃষ্টি, যা বলিউডকে আরো সমৃদ্ধি এনে দিলো।

Pihu (2018) Movie Review || পিহু (২০১৮) মুভি রিভিউ


প্লট বা ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক না,আমাকে যেই জিনিসটা একদম থ করে দিয়েছে সেটা হলো,ফিল্মের মেইন এবং একমাত্র অভিনেতা একটা ২ বছরের বাচ্চা মেয়ে।হ্যা অন্য একজন মহিলা যে বাচ্চা মেয়ে পিহুর মায়ের ভূমিকায় ছিলেন,তিনিও স্ক্রিনে একটু পরে পরে এসেছিলেন কিন্তু তিনি ছিলেন মৃতা একজন।পুরা ৯০ মিনিটের ফিল্মে একটা ২ বছরের বাচ্চা মেয়ে,তার চলন–বলন,তার আধো আধো কথা!পরিচালককে একটা স্যালুট দিতেই হয় যে ২ বছরের বাচ্চাকে দিয়ে এমন অভিনয় করাতে পেরেছেন।অভিনয় তো করিয়েছেন আবার ডাবিং ও করিয়েছেন এই বাচ্চা মেয়েটাকে দিয়ে।হ্যাটস অফ!

পিহুর ২য় জন্মদিন হলো।পরদিন তার বাবার কোলকাতা যেতে হবে একটা জরুরী মিটিং এর জন্যে।জন্মদিনের পার্টির শেষে পিহুর মায়ের সাথে তার বাবার ভীষণ ঝগড়া হয়।পিহুর মা সন্দেহ করে পিহুর বাবার সাথে তারই বান্ধুবি এবং পিহুর বাবার কলিগের অনৈতিক সম্পর্ক আছে।এই নিয়ে তুমুল ঝগড়া।পিহুর বাবা সকালে ইস্ত্রি অন রেখেই রাগারাগি করে এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে চলে যায়।এবং পিহুর মা আয়নায় লিপস্টিক দিয়ে সুইসাইড নোট লিখে ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যা করে।পিহু ঘুম থেকে উঠে মাকে জাগানোর অনেক চেষ্টা করে,কিন্তু মা আর জাগে না।ঐদিকে বাবাও বাসায় নেই।তারপর সেই একাকী পিহু ঘটাতে থাকে নানা ঘটনা।

এই ফিল্মে একটা জিনিস বুঝা গেলো যে আমরা শহুরে মানুষ কি পরিমাণ যান্ত্রিক হয়ে যাচ্ছি।প্রতিবেশীরা আরেকজন প্রতিবেশীর গালমন্দ করেই সময় পায় না,খবর রাখবে কিভাবে?আমাদের অবশ্যই আরো বেশি সচেতন হওয়া উচিত।

স্যার বলেন,বয়স্কদের থেকে বাচ্চারা বেশি ভালো অভিনেতা।শুধু ভালো না,বাচ্চারা ভয়ঙ্কর ভালো অভিনেতা।তাদের এত কিছু বুঝানোর দরকার নেই যে এই শট,এই ডায়লগ হেনো–তেনো।তাদেরকে বলো,অভিনয় একটা খেলা।তারা একদম খেলে দিবে।
পর্দায় এই বাচ্চা পিহুকে দেখে সেটাই বুঝলাম।সে অভিনয় করছিল না,সে খেলছিল।
অসাধারণ ।

Sleep Tight (2011) Movie Review || মুভি রিভিউ


“Let's wipe that smile off that face”

স্প্যানিশ চলচিত্র জগতের আলোড়নকারী একটি সাইকোলজ্যিকাল থ্রিলার  ফিল্ম Jaume Balagueró এর “Sleep Tight”. ২০১১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত মুভিটি সারা বিশ্ব জুড়ে দর্শকনন্দিত হয়। সাফল্যের ধারাবাহিকতায় আরেকটি মাত্রা যুক্ত হয় যখন দক্ষিন কোরিয়ায় এর রিমেক করা হয় “Door Lock” নামে। মাত্র ২ টি প্রধান চরিত্র এবং গুটিকতক প্বার্শ-চরিত্রে মুভিটি অনেকাংশে অবাক করার মতো প্রতিক্রিয়া পেতে সক্ষম।

বাসায় একা? ঘুমাচ্ছেন? ঘুমানোর আগে খেয়াল করেছেন, কেউ বিছানার নিচে আছে কিনা কিংবা ওয়াশরুমে অথবা লুকিয়ে অন্য কোথাও? ঘুম থেকে উঠে বুঝতে পারবেন কি ঘটে গিয়েছে আপনার সাথে, গত রাত্রে?
হয়তো এমনই সব ভাবনার মুখোমুখি হবেন মুভিটা শেষ করার পর।

Plot Summary:- সিজার একটি এপার্টমেন্টের প্রহরী। ইহজগৎে তার একটি মাত্র সমস্যা, সে সুখী নয়। ছোটখাটো আনন্দে তো নয়ই বরং তার জীবনের সবচেয়ে আনন্দঘন ঘটনাও তাকে সুখী করতে পারেনি। তার জীবনে নেই কোনো অনুপ্রেরনা, নেই উৎসাহ, নেই বেঁচে থাকার জন্য বিন্দুমাত্র লক্ষ। যন্ত্রনাদায়ক এই জীবন সিজারের জন্য অসহ্য হয়ে উঠে। কিন্তু এপার্টমেন্টের সকল ভাড়াটিয়ার সাথে তার চমৎকার সম্পর্ক। অন্যের উপকারে সে সর্বদা এগিয়ে আসে। কিন্তু এটা তার মুখোশ মাত্র, অন্যের দুঃখেই বরং সে একটু আনন্দের ছোঁয়া পায়। এপার্টমেন্টের এক হাসিখুশি এবং প্রানবন্ত তরুনী ক্লারা। কোনো দুঃখই যেনো তাকে স্পর্শ করেনা। সিজারের লক্ষ্য ক্লারার জীবনের হাসিটুকু ছিনিয়ে নিয়ে আলতো করে কান্নার ছোঁয়া লাগিয়ে দেওয়া, বিনিময়ে জীবনে একটুখানি প্রশান্তি লাভ।

কাহিনী এগিয়ে যাবে ধীরে আর আপনাকে নিয়ে যাবে রোমাঞ্চকর এক অতিমানবীয় অনুভূতির মধ্য দিয়ে। সমগ্র চিত্ত বিকৃত হয়ে দংশন করবে যখন মনে হবে আমরাও তো মাঝে মাঝে অন্যের অপকার করে/দেখে আনন্দ পাই কিন্তু বিনিময়ে অপরপক্ষ কি নিদারুন কষ্ট অনুভব করে।

“Cell 211” মুভিতে দুর্দান্ত অভিনয় করা Luis Tosar 'সিজার' চরিত্রে নিজেকে আবির্ভূত করেছেন এমন এক দ্বৈত চরিত্রে, যেখানে তার সমগ্র প্রতিভা যেনো বিকশিত হয়েছে। ক্লারা চরিত্রে ছিলেন Marta Etura, যার হাসিখুশি মুখটা আপনাকে নিয়ে যাবে অন্য এক ভুবনে।

অসাধারন স্ক্রিনপ্লে, ভয়ংকর শীতল এটিটিউড, প্রতি মুহূর্তে রোমাঞ্চকর ছোঁয়া, ফিনিশিং এ অবাক হওয়ার অনুভূতি নেওয়ার জন্য “Sleep Tight” একটি উৎকৃষ্ট মুভি। থ্রিলার-সাসপেন্স প্রেমীদের জন্য মাস্ট সি মুভি।

হিংসা, ঈর্ষা থেকে নিজেকে দূরে রাখুন, নিজে সুস্থ থাকুন এবং ভালো রাখুন কাছের মানুষটিকে।

© movie review bd 

Ratsasan (2018) Movie Review || মুভি রিভিউ

Ratsasan (2018)

আরুণ কুমার (Vishnu  Vishal) থাকে একজন প্যাশনেট মুভি মেকার, যদিও তার একটা স্ক্রিপ্টও কোন প্রযোজকের মন কেড়ে নিতে পারে নি। বোন, পুলিশ অফিসার দুলাভাই ও ছোট একটা ভাগ্নি আছে তার। প্রত্যেকটা ডিরেক্টরেরই একটা নিজস্ব স্টাইল থাকে, এখানে অরুণ কুমারেরও একটি নির্দিষ্ট গল্পের মুভি বানানোর ইচ্ছা প্রবল থাকে, সেটি হল সিরিয়াল কিলিং! তার রুমের দেয়াল জুড়ে শুধু ভারতই নয়, প্রায় পুরো বিশ্বের নানান সময়ের আলোচিত সিরিয়াল কিলারদের নিয়ে প্রকাশিত পেপার/ম্যাগাজিন/বুক কাটিং দিয়ে সাঁটা থাকে। দুর্ভাগ্যক্রমে যখন তার মুভি মেকিং কোন ভাবেই আলোর দিক দেখছিল না, তখন তার দুলাভাই তাকে এক প্রকার অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাকে পুলিশের এস আই পদে জয়েন করিয়ে দেয়।
এরপর একের পর এক হত্যাকান্ডের মধ্য দিয়ে মুভির কাহিনী এগিয়ে চলে। প্রত্যেকবার স্কুলের কোন না কোন মেয়ে অপহৃত হতে থাকে। ঠিক তার দুই দিন পর তাদের লাশ পাওয়া যায় বিভিন্ন জায়গায়, খুবই বিকৃত ভাবে মেয়েগুলো কে হত্যা করা হত, এবং ইন্টারেস্টিংলি সবার বাড়ির আশেপাশেই একটা গিফট বক্স থাকত, যেখানে থাকত একটি পুতুলের কাটা মাথা এবং সে মাথাগুলো বিকৃত ভাবে কাটা। আশ্চর্যের ব্যপার হল, লাশগুলোর মুখমন্ডল গুলোও ঠিক সেইভাবেই কাটা থাকত। এভাবে চলতে চলতে ৪ নম্বর ভিক্টিম হয় অরুণের ভাগ্নি। যথারীতি তার লাশও পাওয়া যায় তার দুলাভাইয়ের গাড়ির পিছনের বক্সে। এই সময়েই বিভিন্ন ক্লু মিলিয়ে দেখা দেখা যায় যে যে মেয়েগুলো হত্যা করা হয়েছে তাদের প্রত্যেকেরই স্কুলে ঠিক তার দুই দিন আগে কোন না কোন ফাংশন অনুষ্ঠিত হয়েছে, এবং সেখানে একজন মহিলা (!) ম্যাজিশিয়ান ম্যাজিক পারফর্ম করেছে, এই ক্লু ধরে এগিয়ে যেতে যেতেই এক সময়ে খুনী ধরা পড়ে। কিন্তু দেখা যায় খুনী একজন পুরুষ, যে কি না তার মায়ের বেশ ধরেই একের পর এক খুন করে চলে। যদিও বিশ্বের তাবদ সিরিয়াল কিলিং এর মতই এখানেও রয়েছে এক হৃদয় বিদারক ঘটনা, যেটা যে কারোর কাছেই বেশ কষ্টের মনে হতে পারে।

এবার আসি এই ছবির বেশ কিছু জায়গায়, যেখানে দর্শক হিসেবে আমার কিছু অসঙ্গতি লেগেছে।

১। হয়ত প্রত্যেক সিরিয়াল কিলারেরই কিছু নিজস্ব স্টাইল থেকে থাকে, যার ফলে তাদের কিলিং এর ধরন প্রায় একই থাকে, কিন্তু তারা এখানে কিলার প্রত্যেকবারের ফাংশনের ম্যাজিকে এসিস্ট করা মেয়েগুলোকেই কেন বেছে নিলেন, এতে করে তার ধরা পড়াটা বেশ সহজ ছিল, এত পেঁচানোরও দরকার ছিল না। এখন অনেকেই সিনেমাতে যেভাবে উপস্থিত করা হয়েছে বিষয়টা তার সাথে সুর মিলিয়ে বলতে পারেন, সেই মেয়েটিকে প্রলুব্ধ করা সহজ ছিল। কিন্তু বিষয়টি তেমন না, যেই বয়সী মেয়েদের এখানে দেখানো হয়েছে, তারা ম্যাজিকে এসিস্ট না করলেও শুধু ম্যাজিক দেখার ফলেই পরবর্তীতে সেই খুনীর প্ররোচনার ফাঁদে পড়ত।

২। হরমোনাল প্রবলেমের কারণে যে কিশোরটি ইম্পোটেন্ট ছিল, সেই লোকটি বড় হয়ে একজন পুলিশ অফিসারের সাথে যেভাবে পাল্লা দিয়ে ফাইট করে গেল, সেটা হাস্যকর বললেও কম বলা হয়ে যাবে। যদিও অনেকেই বলবে মুভিটিতে একটু বাড়তি উত্তেজনা যোগ করাই ছিল এত উদ্দেশ্য, তাহলে মেনে নিতে আপত্তি নেই যে এর দরকার ছিল।

ভালো লেগেছে যে যে বিষয়ঃ

১। ঠিক এই ধরনের মুভি ইন্ডিয়ান সিনেমাকে অনেক উপরে তুলতে সাহায্য করবে। কাহিনী, অভিনয় সর্বোপরি সাস্পেন্সে ভরপুর একটি সিনেমা, মানতেই হবে।

২। শেষ মেয়েটি কে দেখানো হয়েছে ক্লাস টেন টপার, কিন্তু সে ব্যাকবেঞ্চার, এটা খুবই ভাল লেগেছে। শুধু সামনের পোলাপানই ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার কিংবা সায়েন্টিস্ট হবে, এটা ভাবা ঠিক না।

৩। এটা আসলে ভাল লাগার বিষয় না, কিন্তু মনে দাগ কেটেছে, সেটা হল অরুণের ভাগ্নির লাশের ব্যাপারটা যেভাবে ওর বোনের কাছে লুকিয়ে মর্গে নিয়ে যাওয়া হল, সেই ৭-৮ মিনিট আমি জীবনের ভুলব না। অসাধারণ অভিনয়, সিনেমাটোগ্রাফি এবং পরিচালকের পান্ডিত্য আমাকে মুগ্ধ করেছে।

সব শেষে, এ ধরনের সিনেমা আরও হওয়া উচিৎ, এতে করে আমাদের মত সিনেমাভোজীদের ক্ষুধা আরও অনেক বেড়ে যাবে, সাথে বাড়বে সুস্থ ধারার বিনোদনের প্রতিযোগিতা।
© Movie Review Bd 

একজন রবার্ট ডাউনি জুনিয়রের কথা

Iron man, avenger,  avengers end game, avengers 2019, rdj,

আই অ্যাম আয়রন ম্যান’—এই সংলাপের পর তাঁর পরিচয় নতুন করে দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। এক সংলাপে ডুবতে বসা ক্যারিয়ার এবং মার্ভেল সিনেমাটিক ইউনিভার্স দুই-ই একসঙ্গে দেখেছিল সাফল্যের মুখ। তাঁর নাম রবার্ট ডাউনি জুনিয়র। এর চেয়ে বড় করে পরিচয় দেওয়ার মতো আসলেও কিছু নেই। কারও কাছে টনি স্টার্ক, আবার কারও কাছে শার্লক হোমস।

আমাদের জীবনের প্রথম সুপারহিরো হয়ে আসেন আমাদের বাবা। হুমায়ূন আহমেদ বলেছেন, ‘পৃথিবীতে অনেক খারাপ মানুষ থাকতে পারে, কিন্তু একটাও খারাপ বাবা নেই।’ রবার্ট ডাউনির ক্ষেত্রে আক্ষরিক অর্থে তাঁর বিপরীত। তাঁর জীবনে তাঁর বাবা কোনো সুপারহিরো নন, বরং সুপার ভিলেন। ছয় বছরের বাচ্চার হাতে যেখানে বাবারা তুলে দেন আইসক্রিম কিংবা চিপস, সেখানে তিনি তুলে দিয়েছিলেন মাদক। ছয় বছর বয়সে নিয়মিত হিরোইন সেবন করা ডাউনি আট বছরের মধ্যেই হয়ে যান পুরোপুরি মাদকাসক্ত। একজন মাদকাসক্ত যেভাবে গোগ্রাসে মাদক সেবন করতে পারে, ঠিক সেভাবেই পারতেন রবার্ট ডাউনি জুনিয়র।

বাবা রবার্ট ডাউনি সিনিয়রকে নিজের জীবনের সুপার ভিলেনের বদলে অ্যান্টি হিরো হিসেবে কল্পনা করলেই ভালো হবে। মুখে মাদক তুলে দেওয়ার আগে দাঁড় করিয়ে দিয়েছিলেন সিনেমার ক্যামেরার সামনে। সিনিয়র রবার্ট ডাউনি ছিলেন সিনেমার পরিচালক, নিজের বানানো ‘পাউন্ড’ (১৯৭০) সিনেমায় এক মিনিটের চরিত্রে সুযোগ দেন ছেলেকে। সিনেমায় তাঁর একমাত্র সংলাপ ছিল, ‘ডু ইউ হ্যাভ অ্যানি হেয়ার ইন ইয়োর বলস?’ ওটুকুই যথেষ্ট ছিল। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকানো নয়। একসঙ্গে দুই নেশায় জড়িয়ে পড়ে ছোট্ট ডাউনি। এক মাদক, দুই অভিনয়। গভীর রাতে এই দুই নেশার একমাত্র দর্শক ছিলেন তাঁর বোন অ্যালিসন। মাদকে যখন পুরোপুরি ডুবে আছেন, তখনই শিখে ফেললেন ব্যালে নাচ, মাত্র ১০ বছর বয়সে!
মা এলসি অ্যানের অভিনয় ক্যারিয়ার আর রবার্ট ডাউনি সিনিয়রের সিনেমা। দুইয়ের মধ্যে এক হয়ে ছিল দুই ভাইবোন অ্যালিয়াস আর অ্যালিসন। কিন্তু তা–ও শেষ হয়ে গেল ১১ বছর বয়সে। মা-বাবার বিবাহবিচ্ছেদ দুই ভাইবোনকে সরিয়ে দিল চিরতরে। স্ত্রীকে ডিভোর্স দেওয়ার বেদনায় সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে মদ্যপান করতেন ডাউনি সিনিয়র। ১৭ বছর বয়সে তাঁকে বের করে দেওয়া হয় স্কুল থেকে। বাবা তাঁকে ছেড়ে দিয়েছেন, সঙ্গী বলতে ওই এক মাদক। এ অবস্থায় এসে ভাবলেন, মাদক সেবন বাদে আর একটি জিনিসই তিনি পারেন, সেটা হলো অভিনয়!

বাবার নামের জোরে হলিউডপাড়ায় টুকটাক ছোটখাটো চরিত্রে অভিনয় করে সময় কাটছিল। কিন্তু পাশার দান বদলে দিল ‘লেস দ্যান জিরো’ সিনেমার স্ক্রিপ্ট! সেখানে তাঁর চরিত্র ছিল জুলিয়ান ওয়েলস নামে এক তরুণের, যার পুরো জীবন কেটেছে মাদকে ডুবে। কোকেনে ডুবে থাকা ওয়েলসের চরিত্রে যেন জীবন্ত হয়ে উঠলেন রবার্ট ডাউনি জুনিয়র। সিনেমা শেষ করার পর নিজের কাছেই উপলব্ধি করলেন, এই যে দর্শকের তালি পাচ্ছেন, তা তো অভিনয়ের জন্য নয়। এই জুলিয়ান ওয়েলস তো অন্য কেউ নন, এ তো তাঁর নিজের জীবনের কাহিনি। নিজের জীবনকে সিনেমার পর্দায় তুলে ধরেছেন, সিনেমার পর্দায় ছাড়তে পেরেছেন, তবে বাস্তবে কেন নয়?

১৯৮৯ সালে ‘দ্যাটস অ্যাডেকোয়েট’ নামের কমেডি সিনেমায় ফুটিয়ে তুললেন আলবার্ট আইনস্টাইনকে। তা দেখেই রিচার্ড অ্যাটেনবোরোর মন গলে গেল। এই ছেলেকেই তো এত দিন খুঁজছিলেন। এক বিশেষ চরিত্রের জন্য, কিন্তু সময় মিলছিল না কারও। চরিত্রে কাজ করার কথা ছিল জনি ডেপ, জিম ক্যারির মতো তারকার। কিন্তু ভাগ্যদেবী চরিত্রটি যে রবার্ট ডাউনি জুনিয়রের জন্যই প্রস্তুত করে রেখেছিলেন। চরিত্রের জন্য যখন প্রথম স্ক্রিপ্ট পেলেন, তখন সঙ্গে সঙ্গে সাইন করে ফেললেন। ফেলবেন না কেন? কারণ সিনেমাটি ছিল চার্লি চ্যাপলিনের জীবনের ওপর তৈরি করা ‘চ্যাপলিন’। এরপর যখন স্ক্রিপ্ট পড়লেন, তখন আবার আকাশ থেকে পড়লেন। মনে হচ্ছে, আমাকে এক বিলিয়ন ডলারের লটারি দিয়ে জেল খাটানো হচ্ছে। কারণ সিনেমার চার্লি চ্যাপলিনের মতো হাঁটাচলা এমনকি স্ট্যান্ট—সব নিজেকে করতে হয়েছে।
অবশেষে ‘চ্যাপলিন’ মুক্তি পায়। তাঁর দুর্দান্ত অভিনয়ে মুগ্ধ দর্শক থেকে সমালোচক—সবাই। তবে ‘বাফটা’ ও লন্ডন ক্রিটিকসদের কাছ থেকে সেরা অভিনেতার পুরস্কার বাগিয়ে নেন। অস্কারে মনোনয়ন পেলেও জেতা হয়নি। নিজের তীক্ষ্ণ সেন্স অব হিউমার দিয়ে বলেছিলেন, ‘ব্যাপার না। একদিন না একদিন পাবই। বুড়ো হলেও একটি অস্কার দেওয়া হয় আজীবনের সম্মাননাস্বরূপ। বুড়ো তো হবই, সুতরাং অস্কার আমার হবে।’

অস্কারের মঞ্চে পরিচয় দেবোরাহ ফ্যালকোনারের সঙ্গে। তাঁকে বিয়ে করেন ডাউনি। তাঁদের এক সন্তানও হয়, নাম ইন্দিও ফ্যালকোনার। ঝামেলা তাঁর কাছে ছিল নিকট আত্মীয়ের মতো। ১৯৯৫ থেকে ২০০১ সাল—এই কয়েক বছরে সম্ভবত জেল-আদালত-বাসা বাদে অন্য কোনো দিকে নজর দেওয়ার সময় পাননি। একবার জেলে যান, এরপর মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পাওয়া। এর কয়েক দিন পর আদালতে হাজিরা দেওয়া। আবার জেলে যাওয়া নতুন কোনো অভিযোগে। ‘ডক্টর স্ট্রেঞ্জ’ সিনেমার ইনফিনিটি টাইম লুপের মতো। চলতেই আছে, কোনো থামাথামি নেই। মায়ের স্নেহের অভাব বোধহয় খুব বাজেভাবে অনুভব করছিলেন। এই সময়ে মেয়েকে নিয়ে চলে যান স্ত্রী ফ্যালকোনারও।

বারবার প্রতিজ্ঞা করেও যেন বৃত্ত থেকে বের হতে পারছিলেন না। হলিউডপাড়াতেও তত দিনে খারাপভাবে তাঁর নাম ছড়িয়ে গেছে। কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। না ছাড়তে পারছেন মাদক, না পারছেন মনোযোগ দিতে অভিনয়ে। কেউ সুযোগও দিচ্ছেন না। মাদকাসক্তি কাটাতে শুরু করলেন বিশেষ ধরনের মার্শাল আর্ট। বিপদ এগিয়ে এলেন অভিনেতা ও বন্ধু মেল গিবসন। সুযোগ দেন ‘দ্য সিঙ্গিং ডিটেকটিভ’ সিনেমায়। এই প্রতিদানে এখন বলেন, মেল গিবসন তাঁর কাছে একজন অভিনেতা, একজন বন্ধুর চেয়েও বেশি কিছু। মাদক থেকে বাঁচাতে যেন ত্রাতা হয়ে এলেন একজন। নাম তাঁর সুজান ডাউনি। সুজান তাঁদের বিয়ের সময় একটি শর্ত দিয়েছিলেন, আর জীবনে কখনো মাদক ধরা যাবে না! সেই শেষ! মাদকের সঙ্গে এত বছরের প্রেম শেষ করে প্রেম করা শুরু করলেন সুজান ডাউনির সঙ্গে। মাত্র ৪২ দিন প্রেম করে বিয়ে, সেই প্রেম চলছে এখনো। হলিউডপাড়ায় সেরা দম্পতির তালিকায় সুজান-রবার্ট নামটা ওপরের দিকেই থাকে।
বিয়ের পর বাকি রইল দুই—এক সুজান, দুই ক্যারিয়ার। ফলে ক্যারিয়ারের গ্রাফও আস্তে আস্তে ওপরের দিকে উঠতে থাকে। ‘কিস কিস ব্যাং ব্যাং’, ‘গুড নাইট’-এর মতো সিনেমার সঙ্গে যুক্ত হয় তাঁর নাম। তবে সবচেয়ে কাঁপিয়ে দেওয়া অভিনয় করেন ‘জোডিয়াক’ সিনেমায়। গত শতকের সত্তর দশকে ঘটে যাওয়া সিরিয়াল কিলিংয়ের ওপর বানানো সিনেমায় জ্যাক গিলেনহ্যাল, মার্ক রাফেলো, অ্যান্থনি অ্যাডওয়ার্ডসের পাশে থেকেও আলো কেড়ে নেন রবার্ট ডাউনি জুনিয়র। ‘পল অ্যাভেরি’ চরিত্রে ডাউনির অভিনয় চোখ রাঙিয়ে দেয় জন ফ্যাভ্রুয়ের।

মার্ভেলের অবস্থা তখন নড়বড়ে। নিজেদের সেরা সুপারহিরো ক্যারেক্টার ‘হাল্ক’, ‘স্পাইডার-ম্যান’, ‘ফ্যান্টাস্টিক ফোর’, ‘এক্স-ম্যান’ বিক্রি করে দিয়েছে অন্য ফ্র্যাঞ্চাইজির কাছে। তবুও দেউলিয়া হওয়া থেকে নিজেদের বাঁচাতে পারছিল না। শেষমেশ ধারদেনা করে একটি সিনেমা বানানোর কাজে হাত দেয় ‘মার্ভেল’। সিনেমার কাজ দেওয়া হলো ‘জঙ্গল বুক’–এর মতো সিনেমা বানানো জন ফ্যাভ্রুয়ের হাতে। মার্ভেল বলেছিল ব্র্যাড পিট কিংবা টম ক্রুজের কাছে যেতে। কিন্তু ‘টনি স্টার্ক’ চরিত্রের জন্য একজনকেই পছন্দ ছিল জন ফ্যাভ্রুয়ের। তাই মার্ভেলের সঙ্গে মোটামুটি যুদ্ধ করে সিনেমার পুরো স্ক্রিপ্ট না নিয়েই শুরু করলেন মার্ভেল ইউনিভার্সের।

‘এসি/ডিসি’ ব্যান্ডের ‘ব্যাক ইন ব্ল্যাক’ গান ব্যাকগ্রাউন্ডে, হাতে ওয়াইনের গ্লাস টলমল। সেই শুরু। একজন টনি স্টার্ক কিংবা রবার্ট ডাউনি জুনিয়রের উত্থান! এ দৃশ্য দিয়ে শুরু টনি স্টার্ক কিংবা রবার্ট ডাউনি জুনিয়রের উত্থান হয়নি। উত্থান হয়েছিল সিনেমা ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ইউনিভার্সের। শুরুর শুটিংয়ের দিনও হয়তো কেউ ভাবেনি, ১২ বছর পর এখনো সমানভাবে সেই একই আগ্রহ থাকবে। কিন্তু টনি স্টার্ক চরিত্রে সঙ্গে একেবারে মিশে যান ডাউনি। একদিকে সনির ‘স্পাইডারম্যান’, অন্যদিকে ডিসির ‘ব্যাটম্যান’। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কমিক বুক সুপারহিরো এই দুজন। অন্যদিকে কমিক দুনিয়ার ‘বি-গ্রেড’ একটি চরিত্র ‘আয়রন ম্যান’। জন ফ্যাভ্রুয়ের হাতে অন্য চরিত্র বেছে নেওয়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু এই মাতাল, বিলিয়নিয়ার, সুপার জিনিয়াস স্টার্ককেই মনে ধরল তাঁর। লাইভ অ্যাকশন সুপারহিরো দুনিয়ায় নতুন করে আবির্ভূত হলেন রবার্ট ডাউনি জুনিয়র। স্পাইডারম্যান কিংবা ব্যাটম্যানের মতো পুরো শহর বাঁচানোর দায়িত্ব তার কাঁধে না। স্টার্ক ইন্ডাস্ট্রিজের মালিক থেকে অপহৃত হওয়া এক বন্দী। গুহার ভেতরে বানিয়ে ফেলা এক আয়রন ম্যান স্যুট! এরপর নিজেকে আর বিশ্বকে রক্ষা করা। ছোট্ট করে এই ছিল টনি স্টার্কের সূচনা।
কিছুদিন আগে এই সিনেমার ভিলেন চরিত্রে অভিনয় করা জেফ ব্রিজেস বলেছেন, ‘আমাদের কাছে পুরো স্ক্রিপ্ট কখনোই ছিল না। আমরা হাফ স্ক্রিপ্টে কাজ করতাম। আমরা অভিনয়ের মাঝেমধ্যেই নিজ থেকে ডায়লগ বলতাম, যেগুলো মুভিতে জায়গা পেয়েছে। এমনকি আমি, রব, জন মিলে মুভির কোন সিন শুট করা যায়, তা–ও ভেবে বের করতাম।’

গিনেথ প্যালট্রো আর জেফ ব্রিজেসকে নিয়ে শুরু করা মার্ভেল ইউনিভার্সে সিনেমা, লোক আর পয়সার অভাব নেই। শুধু আয়রন ম্যান থেকে টিম-আপ করেছেন বিশ্বের সব সুপারহিরোর সঙ্গে। ক্যাপ্টেন আমেরিকা, হাল্ক, থর, ব্ল্যাক উইডো, হক আই আর আয়রন ম্যান। সব মিলে ‘অ্যাভেঞ্জার্স’। এই চবির তিন পর্ব শেষে আসছে চতুর্থ পর্ব। টিম-আপ হয়ে গেছে গার্ডিয়ান্স, ডক্টর স্ট্রেঞ্জের সঙ্গে। নিজের ছত্রচ্ছায়ায় এনেছেন স্পাইডারম্যানকে। ২২ সিনেমা শেষে এখন এই কাহিনি এসে পৌঁছেছে ‘এন্ডগেম’–এ। মার্ভেলের বিশাল ‘ইনফিনিটি সাগা’র শেষ হবে এই ‘এন্ডগেম’ দিয়ে।
আয়রন ম্যান তো মাত্র শুরু! সঙ্গে সঙ্গেই স্ক্রিপ্টের পর স্ক্রিপ্ট জমা হতে লাগল। সুজানের কাজ পড়ল ডাউনির জন্য ভালো সিনেমা বের করা। এর মধ্যেই অভিনয় করলেন ‘ট্রপিক থান্ডার’ সিনেমায়। ২০১১ সালে সুযোগ পেলেন বইয়ের পাতা থেকে তুলে আনা আরেক চরিত্রে অভিনয়ের। স্যার আর্থার কোনান ডয়েল রচিত ‘শার্লক হোমস’! আলবার্ট আইনস্টাইন, চার্লি চ্যাপলিন, টনি স্টার্কের পর শার্লক হোমস—একটুও ঘাবড়ালেন না তিনি। বিলিয়নিয়ার প্লে বয় টনি থেকে ডিটেকটিভ শার্লক হতে এক মিনিটও যেন সময় লাগেনি তাঁর। পুরো চরিত্র যেন তাঁর জন্যই তৈরি। শার্লকের দুই পর্ব শেষ করে তৃতীয় পর্বের শুটিং করছেন এখন। এর আগে শার্লকের ক্যারেক্টরকে সিনেমা পর্দায় এত সুন্দরভাবে ফোটাতে পারেনি কেউই।

জাজ হ্যাঙ্ক প্যালমারের চরিত্রে ‘দ্য জাজ’ আর বন্ধু জন ফ্যাভ্রুয়ের ‘দ্য শেফ’ সিনেমায় অনবদ্য অভিনয় যে কাউকে মুগ্ধ করতে বাধ্য। এ বাদে আর কোনো সিনেমায় দেখা যায়নি তাঁকে। মার্ভেল ইউনিভার্সের টনি স্টার্ক চরিত্রের কারণেই অন্যান্য সিনেমা থেকে তাঁর দূরে থাকা।
Movie reviwe, tony stark, iron man, rdj, robart dawniy j, avenger, end game

ব্যক্তিগত জীবনে একেবারেই অদ্ভুত রকমের একজন মানুষ তিনি। যেমন বিনয়ী, তেমনই সময় পেলে সহ-অভিনেতাদের পচাতেও পিছপা হন না। হলিউডপাড়ায় সেন্স অব হিউমারের দিক দিয়ে শীর্ষস্থানীয় ডাউনি। একসময় যিনি মাদকের পেছনেই সব ডলার উড়িয়ে দিতেন, সেই মানুষটা এখন বিশ্বে সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক পাওয়া অভিনেতাদের একজন। এক আয়রন ম্যান চরিত্রে অভিনয় করেই তাঁর আয় প্রায় এক বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। সামনে আসা ‘এন্ডগেম’ থেকে প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ডলার পারিশ্রমিক নেবেন ডাউনি। নিজের ফ্যামিলি আর আয়রন ম্যান ছাড়া আর এখন কোনো চিন্তা নেই তাঁর মাথায়।
তাঁর জন্মই হয়েছিল ‘টনি স্টার্ক’ চরিত্রে অভিনয়ের জন্য। এখন এটাই মনে করেন নিজে। নিজের নামের মধ্যেই লুকিয়ে আছে ‘ডাউন’ শব্দটা। জীবনের শুরু থেকেই ডাউন হওয়া ডাউনির জীবনে এখন শুধুই ওপরের দিকে ওঠা। নিজের স্ত্রী সন্তান নিয়ে সুখী রবার্ট। জীবনে অনেক ঘাত–প্রতিঘাত যিনি দেখেছেন, মাদক এত বছরে যার চেহারাকে তেমন কিছুই করতে পারেনি।

সেই মানুষটার জন্মদিন ছিল ৪ এপ্রিল। শুভ জন্মদিন রবার্ট ডাউনি জুনিয়র।

Inception (2010) মুভি রিভিউ

এই ছবির মূলভিত্তি হল স্বপ্ন শেয়ারিং এবং স্বপ্ন তৈরি করা। অর্থাৎ অন্যের অবচেতন মনে ঢুকে স্বপ্ন অবজার্ভেশন করা এবং নিজেদের উদ্দেশ্যকে সফল করার জন্য স্বপ্নের পরিবেশ তৈরি করা। এই কাজে তারা উপস্থিতবুদ্ধি সম্পূর্ণ একজন অর্কিটেকের সহয়তা নেয়। এখন কথা হচ্ছে কিভাবে তারা একই সাথে তিন চার জন একই স্বপ্নে প্রবেশ করে? মূলত এই স্বপ্নে প্রবেশে তারা ছোট একটা প্রক্রিয়া অবলম্বন করে যেটা হল পুরা সাইন্সফিকশন অর্থাৎ এটার বাস্তব কোন লজিক নেই। বাস্তবধর্মী মেডিটেশন কিংবা হিপনোটাইজ প্রক্রিয়ায় যেভাবে মানুষের মনকে নিয়ন্ত্রণ করা হয় এখানে সেইরূপ কোন সাইট্রিফিক কোন মেথড ব্যবহার করা হয় না বরং একটা ছোট ডিভাইস ব্যবহারের মাধ্যমে কাজটি করা হয়। তাই মুভির আসল সাধ অনুভব করতে হলে আপনাকে এটা মেনে নিতে হবে অতিরিক্ত বাস্তববাদী হলে মুভি না দেখাই ভালো। আর ছবিটা সাবটাইটেল ছাড়া না দেখাই ভালো ।
মুভিটা শুরু হয় সমুদ্র সৈকতে অচেতন অবস্থায়একজনকে(কোব=ডিক্যাপিও)পাওয়ার মাধ্যমে। কোবকে নেয়া হয় মিঃসাইতো এর সামনে। এরপর শুরু হয় কোব ও সাইতোর মুখোমুখি হবার পূর্ববতী ঘটনা।

কোব মুলত একজন এক্সট্রাক্টর। এক্সট্রাকর হল সেই যে অন্যের স্বপ্নে প্রবেশ করার ক্ষমতা রাখে সাথে সাথে সে স্বপ্নকে নিয়ন্ত্রণও করতে পারে। প্রয়োজনে সে অন্যের হাত থেকে স্বপ্নর মাধ্যমে যাতে কেউ তার আইডিয়াকে চুরি করতে না পারে সেই ব্যবস্থাও করতে পারে। অপরদিকে মিঃসাইতো একজন ক্ষমতাধর ব্যবসায়ী। কোবাল ইঞ্জিনিয়ারিং নামক এক কোম্পানি কোব ও তার সহযোগীদের কে ভাড়া করে স্বপ্নের মাধ্যমে মিঃসাইতোর এক গোপন নথির তথ্য উদ্ধার করতে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় তারা সেটা করতে ব্যর্থ হয়।মিঃসাইতোর নিকট স্বপ্নের মাধ্যমে অন্যের গোপন নথি সম্পর্কে জানার এই প্রক্রিয়া মৌলিক আইডিয়া এবং বেশ কার্যকরী মনে হয় ফলে সে কোব ও তার সহযোগী মিঃঅার্থার( জোসেফ) কে তার হয়ে একটি কাজ করার অনুরোধ করে তবে সেটা তথ্য জানা নয় বরং তার ব্যবসায়িক প্রতিদ্বন্দ্বীর মনে এমন এক ধারনা ঢুকিয়ে দেয়া যাতে সে নিজ থেকেই নিজের ব্যবসাকে ধ্বংস করে দেয়। এই অাইডিয়া ঢুকিয়ে দেয়াকেই inception বলে। মজার বিষয় হচ্ছে কোব ও অার্থার আগে কখন এমন কাজ করে নি। এবং তারা জানে এই কাজটি করতে হলে স্বপ্নের তৃতীয় লেয়ারে যেতে হয় যেটা শুধু কষ্টসাধ্য নহে বরং জীবনের জন্যও হুমকি। সেইজন্য তারা প্রথমে রাজি হয়নি কিন্তু যখন মিঃসাইতো কাজটির বিনিময়ে কোবকে তার সন্তানদের কাছে অর্থাৎ বাড়িতে ফিরতে সাহায্য করবে বলে তখন কোব রাজি হয়। কারণ কোব তার স্ত্রী ম্যালের হত্যা মামলার আসামী। সেইকারনে সে অনেকবছর ধরে দেশে ফিরতে পারছে না।এইটুকুই কাহিনী। এখন ডিক্যাপিও (কোব) কি কাজটি ঠিকভাবে করতে পারছে কিনা না আদো সম্ভব না? সে কি তার বাচ্ছাদের কাছে যেতে পারছে এটা জানতে হলে আপনাকে মুভিটা দেখতে হবে। এই ছবির সবচেয়ে সুন্দর দিক হলে এখানে আমরা সচারচর স্বপ্নের মধ্যে যে দৃশ্য গুলো দেখি পরিচালক ক্রিস্টোফার নোলান চেষ্টা করছে ঠিক সেইরূপ দৃশ্য তুলে ধরতে। এখানেই পরিচালক অনেকাংশ সার্থক।

কিন্তু জটলাগে স্বপ্নের লেভেলগুলো বুজতে।
১ম লেভেল হচ্ছে সচারচর ঘুমালে যে স্বপ্ন দেখি। ২য় লেভেল হল আপনি যদি স্বপ্নের ভেতর আবার স্বপ্ন দেখেন। ৩য় লেভেল হল ২য় স্বপ্নের ভেতর যদি আবার স্বপ্ন দেখেন। । এখন আপনার স্বপ্ন ভেঙ্গে যাওয়া মানে এই না আপনি বাস্তবে ফিরে আসলেন বরং আপনি স্বপ্নের ২য় লেভেলে আছেন। আবার স্বপ্ন ভাঙ্গলে আপনি আসবেন ১মলেভেলে। এরপর যদি স্বপ্ন ভাগে তবেই আপনি বাস্তবে ফিরে আসবেন। এই সিকুয়েন্স মেনটেইন করেই মুভির কার্যক্রম চলে। আপনার প্রথম কাজ হচ্ছে এই সিকুয়েন্স টা ধরা। তাহলেই মুভির কাহিণী বুঝা সহজ হবে।
আরেকটা জিনিস খেয়াল রাখতে হবে সেটা হল "সময়"। স্বপ্নে সময়ের গতি বাস্তব জগতের চেয়ে বেশি। ফলে বাস্তব জগতের ৫ মিনিট স্বপ্নে সেটা মনে হবে ১ঘন্টার মতো। শুধু তাই নয় স্বপ্নের লেভেল যত বাড়বে এই গতি তত বৃদ্ধি পাবে। তাই ছবি দেখার মুহুর্তে এই সময়ের গতি বেগের দিকেও ভালো করে খেয়াল রাখতে হবে। এই গতিবেগের মূল রহস্য হল, আমাদের অবচেতন মনের চেতন মনের চেয়ে দ্রুত কাজ করার ক্ষমতা।                                 আরেকটা বিষয় ছবিটাতে ব্যবহার করা হয় সেটা হল টোটেম। যার মাধ্যমে তারা বুঝতে পারে সে কি স্বপ্নে নাকি বাস্তবে আছে। যেমন ডিক্যাপিওর টোটেম হল "লাটিম"। লাটিম ঘুরতেই থাকলে স্বপ্নে আর লাটিম ঘুরতে ঘুরতে বন্ধ হয়ে গেলে বুঝবে বাস্তবে আছে সে।

মুভিটির মাধ্যমে ক্রিস্টোফার সাহেব মুলত আমাদের চিন্তার ও গবেষণার জন্য নতুন একটি ক্ষেত্রের সন্ধান দিয়েছেন। কোনভাবে যদি সত্যি সত্যি স্বপ্ন শেয়ারিং ও স্বপ্ন তৈরি ব্যপারটা নিয়ন্ত্রন করা যায়। অর্থাৎ অবচেতন মনকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তবে সত্যিই একটা শিল্প বিপ্লবের মতো একটা বিপ্লব ঘটে যাবে। ব্যপারটা বুঝার আগে আপনাকে আগে বুঝতে হবে অবচেতন মন কি? এবং অবচেতন মনের ক্ষমতা?
ধরুন আপনার সামনে একপ্লেট সুস্বাদু খাবার রাখা আছে। কিংবা আপনি টয়লেট বসে হাগু করছেন? কখনও কি এমন হয়েছে, আপনি মনের ভূলে বামহাত দিয়ে খাবার খাচ্ছে কিংবা ডানহাত দিয়ে হাগু পরিষ্কার করছেন? আপনার এই দীর্ঘ জীবনে এমনটা কখনও হয়নি এবং কাজগুলোও আপনি চিন্তা ভাবনা করেও করেননি বরং আপনার চেতন মনের অলক্ষ্যেই হয়ে গেছে বা হচ্ছে ।আপনি ভালো করে খেয়াল দেখবেন হঠাৎ করে উড়ে আসা কোন ঢিল প্রতিরোধে আপনার শরীর অটোমেটিক সঠিকভাবে মুভ করছে আপনার বিনা ইন্সট্রাকশনে। এই কর্মকান্ড আপনার চেতন মনের নিয়ন্ত্রনে নহে। এইগুলো ঘটে অবচেতন মনে। শুধু তাই নহে এইকাজগুলো অবচেতন মনের গভীরের এমনভাবে প্রথিত আছে যা আপনার পক্ষে কখনও তা থেকে সরে আসা সম্ভব না।
আর আমরা জানি স্বপ্নে আমাদের অবচেতন মন উম্মুক্ত হয় আর চেতন মন অনেকটা বন্ধ থাকে। তাই পরিচালক ক্রিস্টোফার চেষ্টা করেছে স্বপ্নের মাধ্যমে অবচেতন মনের কর্মকান্ডকে নিয়ন্ত্রন করার। এবং তার মাধ্যমে অবচেতন মনের গভীরে কিছু অাইডিয়া প্রথিত করা যাতে সেটা বাস্তব জীবনেও ঢিল প্রতিরোধের মতো কোন কাজে লাগে।
কি ভাবছেন? অন্যের মাথায় এইভাবে আইডিয়া ঢুকানো কি আদো সম্ভব? হ্যাঁ সম্ভব। এই যে আমি যেভাবে আপনাদের চেতন মনে অাইডিয়া ঢুকিয়ে দিয়েছি এই বলে যে এই ছবিটা সাবটাইটেল ছাড়া দেখবেন না। আপনার চেতন মন অলরেডি ঠিক করেই নিয়েছে যে, inception ছবিটা সাবটাইটেল ছাড়া দেখা যাবে না? ঠিক একই ভাবে অবচেতন মনেও অাইডিয়া প্রথিত করা যাবে।
ডিক্যাপিও, ট্রম হার্ডি, ক্যান, আর্কিটেক চরিত্রে ইলেন পেইজ, জোসেফ গর্ডন সবাই ভালো অভিনয় করে। আমি মনে করি সবচেয়ে বড় অভিনেতা হল পরিচালকর ও লেখক ক্রিস্টোফার নোয়ান। এমন একটা থিম নিয়ে ছবি করার ভাবনা এবং সেটা সার্থক ভাবে উপস্থাপন করা চাট্টিখানি কথা না।
আমার রেটিংঃ৮/১০

'Iron Man' নাকি রবার্ট ডাউনি জুনিয়র কার জনপ্রিয়তা বেশি!

'Iron Man' নাকি রবার্ট ডাউনি জুনিয়র কার জনপ্রিয়তা বেশি!
Iron Man vs RDJ
২০০৮ সালের টনি স্টার্ক/আয়রনম্যানের আগে ও পরে কতশত সুপারহিরো মুভির লাইভ একশান এসেছে। কিন্তু কোনটাই টনি স্টার্কের মত জনপ্রিয়তা পায় নি। এর কারন প্রশ্নের জবাবটা হয়তো হবে "রবার্ট ডাউনি জুনিয়র"। দ্যা এভেঞ্জার মুভির একটা ডায়লগ আছে টনি স্টার্কের। যেখানে ক্যাপ্টেন আমেরিকা অকা স্টিভ রজার্স টনি স্টার্ককে বলে " বিগ ম্যান উইত এ স্যুট অফ এন আর্মার,  টেক দ্যাট অফ হোয়াট ইউ আর?" যার জবাবে টনি স্টার্ক বলে "জিনিয়াস, বিলিয়নিয়ার, প্লেবয়, ফিলেন্থ্রোপিস্ট"। এই এক ডায়লগেই  ইগোয়েস্টিক টনি স্টার্কের চরিত্র ফুটে উঠে। আর এই টনি স্টার্কের চরিত্র রবার্ট ডাউনি জুনিয়র ছাড়া কেউই এভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারতো না। কারন ডাউনি জুনিয়রই যে রিয়েল লাইফ টনি স্টার্ক।

রবার্ট ডাউনি সিনিয়র ছিল পলিটিশিয়ান, হলিউডের এক্টর, ডিরেক্টর, প্রডিউসার, রাইটার। ছোট থেকেই তাই ডাউনি জুনিয়রের হলিউডে পদচারণ। মায়ের সাথে বাবার ডিভোর্সের পরেই বাবার সাথে থাকা শুরু করে ডাউনি জুনিয়র। কিছুদিন বাদে হাই স্কুলের পাঠ চুকিয়ে পুরোপুরি এক্টিং ক্যারিয়ারে মন দিতে চাইলো। কিছুদিন ব্যালে শিখতে কাটিয়েছে ইংল্যান্ডেও যেন এক্টিং ক্যারিয়ারটা আর শক্ত ভাবে গড়ে উঠে। ব্রিটিশ একসেন্টটা আসে সেখান থেকেই।  ১৯৯২ সালে " চ্যাপলিন" মুভির জন্য পেয়েছিল একাডেমি এওয়ার্ড মনোনয়নও। এ যেন মহাতারকার আগমনের জানান দেয়া ছিল। কিন্তু পতন দেখতে খুব বেশিদিন সময়ও লাগে নি। ডাউনি সিনিয়র ছিলেন ড্রাগ এডিক্ট। আর ডাউনি জুনিয়রের মত তার বাবার ভালবাসা দেখানোর একটা মাধ্যম ছিল ছেলেকেও সাথে করে ড্রাগ নেয়া। আর যার ফলে ডাউনি জুনিয়র নিজের প্রথম মারিজুয়ানা নেয় মাত্র ৬ বছর বয়সে৷ যদিও ডাউনি সিনিয়র শেষদিকে নিজের এহেন কর্মের জন্য অনুতপ্ত হয়েছিল। ৯৬ সাল থেকে ডাউনি জুনিয়রকে কোর্টের চার দেয়ালেই ঘুরতে হয়েছে এই ড্রাগ এডিকশানের জন্য। ১৯৯৯ সালে একবার কোর্টে জাজকে বলেছিল " It's like i have a shotgun in my mouth, and I've got my finger on the trigger. And i like the taste of gunmetal.". ১৯৯৬ সালে একবার এরেস্ট হয়েছিল আগ্নেয়াস্ত্র রাখার কারনে। যখন এটা থেকে প্যারেলে মুক্ত হয়েছিল তার কিছুদিন পরেই আবার ট্রেসপাসিং এর কারনে গ্রেফতার হয়েছিল। তিনবছররের জন্য প্রহিবিশনে ছিল৷ তার মাঝেই আবারো এরেস্ট হয় হ্যাভি ড্রাগের কারনে। এরকম করেই পুরো ৯০ এর দশক কেটেছে তার।

২০০১ সালে ড্রাগের সাথে ৬ বছরের ব্যাটেল শেষে ক্যারিয়ারকে আরেকটু গুছিয়ে নিতে চাইলো এবার। রিহ্যাব শেষ করে নিতে নিতে লেগে গেল আর ৬ বছর। ২০০৭ সাল। প্রথম এক্টিং জব ছিল এল্টন জনের মিউজিক ভিডিও "আই ওয়ান্ট লাভ"। যদিও বড় পর্দায় এসেছে আর আগেই। কিস কিস ব্যাং ব্যাং, জোডিয়াক মুভি গুলো করেছিল ২০০৭ এর আগেই। কিন্তু এটা ছিল ২০০৮ সালে যেখানে সে নিজের ক্যারিয়ার ডিফাইনিং রোল পায়।

একবিংশ শতকের শুরুতে যখন সনি পিকচার্স আর টুইন্টি সেঞ্চুরি ফক্স মার্ফেলের ক্যারেক্টারদের দিয়ে বক্স অফিস কাপাচ্ছিল তখন মার্ভেল নিজেদের স্টুডিও শুরু করে নিজেদের হাতে থাকা সুপারহিরোদের নিয়ে কাজ করার জন্য। মার্ভেলের হাতে অনেক কমিক সুপারহিরো থাকার পরেও তারা ডিসাইড করে তাদের প্রথম প্রডাকশন হবে বি লিস্টেড সুপারহিরো আয়রনম্যানের অরিজিন স্টরি। আর ডিরেক্টর হায়ার করা হয় জন ফ্যাভরোকে। রিউমার ছিল টনি স্টার্কের রোলে আসবে টম ক্রুজ। কিন্তু জন ফ্যাভরোর পছন্দ ছিল রবার্ট ডাউনি জুনিয়র। মার্ভেল স্টুডিও থেকে এটা নিয়ে বিরোধিতাও ছিল ডাউনি জুনিয়রের পাস্ট হিস্ট্রির কারনে। কিন্তু ফ্যাভরোর কথা ছিল এটা তার মুভি সো সেই ভাল জানে। ফান ফ্যাক্ট হচ্ছে রবার্ট ডাউনি জুনিয়র স্কুলে একদিনের জন্য সাসপেন্ড হয়েছিল।  সেটার কারনও ছিল স্কুলে ক্লাস আওয়ারে কমিক বুক পড়া। আর সেটাও ছিল আয়রনম্যান ইস্যু নাম্বার ওয়ান।

মার্চ ২০০৭ সাল থেকে আয়রনম্যান মুভির প্রডাকশন শুরু হয়৷ এবং জুন মাসের মধ্যেই শেষ হয়ে যায়। একবছরেরও কম সময়ে ২০০৮ সালের মে মাসে মুক্তি দেয়া হয় আয়রনম্যান। রেজাল্ট ছিল এক্সিলেন্ট। মুভিটা বক্স অফিসে আয় করে ৫৮৫ ডলার। ডাউনি জুনিয়রের এই মুভির জন্য পেমেন্ট ছিল ৫ লাখ ডলার। কিন্তু মুক্তি পরবর্তীতে প্রফিট শেয়ার বেড়ে যা দাঁড়ায় ২ মিলিয়ন ডলারে। মুভিতে টনি স্টার্ককে পরিচয় করাতে সময় লাগে দুই মিনিটেরও কম। শুরুতেই দেখানো হয় এরোগেন্ট, নার্সেসিস্ট, ওম্যানাইজার টনি স্টার্ক। ব্যাসিক্যালি এক্সোজোরেট ভার্শন অফ রবার্ট ডাউনি জুনিয়র। প্রথম শটেই দেখানো হয় টনি স্টার্কের বা হাতে ধরে স্কচের গ্লাস। যা ইন্ডিকেট করে ফ্যামাস আয়রনম্যান কমিক বুক স্টরি "ডিমন ইন এ বোটল" এর।

ডাউনি জুনিয়রকে এর পর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয় নি। আয়রনম্যান-২ রিলিজ হয় ২০১০ সালে। মুভি নিয়ে সমালোচকদের সমালোচনা থাকলেও ডাউনি জুনিয়রের জন্য ছিল শুধুই প্রশংসা। ডাউনি জুনিয়রও সেবার থেকে তার সুপারহিরো ক্যারিয়ারকে সিরিয়াসলি নেয়া শুরু করে। শরীরে প্রটিনের পরিমানে বাড়িয়ে করে নেয় ৩২০০। শুরু করে রেগুলার ইয়োগা ও শিখে নেয় মার্শাল আর্ট। এবং সপ্তাহে ৪ দিন ৯০ মিনিট করে জিম সেশনও শুরু করেন। যা বর্তমানেও বিদ্যমান রয়েছে। তাই ৫৩ বছর বয়সেও পিওর সুপারহিরো লুকে থাকে ডাউনি জুনিয়র৷

সেকেন্ড আয়রনম্যান থেকেই তার সাইনিং মানি ড্রামটিক্যালি বেড়ে যায়। পাঁচ লাখ ডলার এক লাফে হয়ে যায় ১০ মিলিয়ন। আজও রবার্ট ডাউনি জুনিয়রের আপফ্রন্ট মানি মার্ভেল মুভির জন্য টেন মিলিয়ন ডলার৷ কিন্তু প্রফিট শেয়ারে সেটা আকাশ ছুয়ে যায়। আর কন্ট্রাকের বাহিরের মার্ভেল মুভির জন্য তো স্পেশাল ডিল করতে হয়। যেমন ক্যাপ্টেন আমেরিকা সিভিল ওয়ারের জন্য তার আপফ্রন্ট মানি ছিল ৪০ মিলিয়ন ডলার। যা কিনা টাইটেল রোল করা ক্রিস ইভানস থেকেও অনেক বেশি৷ এবং প্রফিট শেয়ার সহ যা দাঁড়ায় ৬৫ মিলিয়ন ডলার।  স্পাইডারম্যান হোমকামিং মুভির ৮ মিনিটেএ এক্সটেন্ডেড ক্যামিওর জন্য নিয়েছে ১৫ মিলিয়ন ডলার। আর গতবছর শেষ হওয়া ইনফিনিটি ওয়ারের জন্য ধারনা করা হয় প্রফিট শেয়ার সহ নিয়েছে ২০০ মিলিয়ন ডলার৷

এ পর্যন্ত রবার্ট ডাউনি জুনিয়র মার্ভেল স্টুডিওর মুভি করেছে  ১০ বছরে ৯ টা। যা থেকে তার আয় ধরা হয় প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলার৷ যেখানে তার মোট সম্পত্তির পরিমান প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ডলার৷ আর  এ মাসে অপেক্ষায় থাকা এন্ড গেম তো রয়েছেই। ধারনা করা হচ্ছে এন্ড গেম দিয়েই আরডিজের মার্ভেল ক্যারিয়ার শেষ হতে যাচ্ছে। তবে ভক্তদের জন্য অবশ্য হতাশার কিছুই নেই। কারন আরডিজে ঠিকই রয়ে যাবে বড় পর্দায়৷ ২০১১ সালে শার্লোক হোমস দিয়ে যে প্রমান করেছে হি ইজ ক্যাপাবল অফ  লিড মোর দ্যান ওয়ান ফ্রেঞ্চাইজি। ২০২০ সালে আরডিজে আসছে "দ্যা ভয়েজ অফ ডক্টর ডুলিটল" নিয়ে। আর আসছে "শার্লোক হোমস-৩" আরডিজে যাচ্ছে না কোথাও শুধু আয়রনম্যানে ফিরে আসছে না।

ভবিষ্যতে হয়তো মার্ভেল আবারো আয়রনম্যানকে পর্দায় ফিরিয়ে আনবে। হয়তো আরডিজেকে রিপ্লেস করে দিবে অন্য কেউ। তার জন্য শুভকামনা থাকবে। আর তার সাহসের জন্য বাহবা দিতে হবে। কারন একটা ইম্পোসিবল রোলই যে সে চুজ করতে যাচ্ছে। কারন আরডিজেই টনি স্টার্ক/ আয়রনম্যান.